চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেছেন, ‘জাতীয় পতাকা একটা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এটাকে কোনোভাবে অসম্মান বা অবমাননা করা যাবে না। এর সম্মান থাকবে অক্ষুণ্ণ। এর ব্যবহারের কিছু নিয়মনীতি এবং যে ধারা আছে, সে অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও পর্যবেক্ষণ উপকমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সকল শিক্ষার্থী, সচেতন মহল, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের পতাকার বিষয়ে অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় মোটিভেশন করতে হবে। তাছাড়া কেউ পতাকার অবমাননা করলে বা করতে চাইলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি শুধু আমার দেশের পতাকার সম্মানের কথা বলবো না। প্রতিটি দেশের পতাকাকে সম্মান জানাতে হবে। আমরা কারও শত্রু নই, আমরা সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। একটা কুচক্রী মহল পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। তা আমাদের সকলের চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে।
তিনি বলেন, সামনে আমাদের বিজয় দিবস। এ দিনে অনেকে পতাকার সুষ্ঠু ব্যবহার না করে বিকৃত করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে পারে। আবার কেউ কয়েক মিনিটের জন্য ছবি বা ভিডিও ধারণ করে প্রোপাগাণ্ডা ছড়াতে পারে। এতে সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়গুলো মাথায় রেখে এগোতে হবে।
সভায় সদস্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) মো. মাহফুজুর রহমান, দৈনিক পূর্বদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম মুন্না, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের চট্টগ্রামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল বারিক, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম, তথ্য কর্মকর্তা জি.এম সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাকীবুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আশীষ কুমার শীল, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক কাজল চৌধুরী, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার (কোতোয়ালী থানা) ইয়াছমিন আকতার, থানা একাডেমিক সুপারভাইজার কমরুন্নিছা খানম, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোরশেদ আলম, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক আবদুল হালিম এবং চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রতন কান্তি দাশ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পতাকার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে ‘জাতীয় পতাকা বিধিমালা’ প্রণয়ন করে। যা ২০১০ সালের মে মাসে সংশোধন করা হয়। বিধিমালা অনুযায়ী, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা তৈরি করতে হবে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ এ মিলাদুন্নবী ও সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্য যেকোনো দিবসে বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন প্রাঙ্গণে ও কনসুলার কেন্দ্রগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। শোক দিবস সমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে জাতীয় পতাকা পুরোপুরি উত্তোলন করে তারপর অর্ধনমিত অবস্থায় নামিয়ে আনতে হবে। আর দিনের শেষে জাতীয় পতাকা নামানোর সময় প্রথমে অর্ধনমিত অবস্থা থেকে পুরোটা উত্তোলন করে তারপর নামিয়ে আনতে হবে।
জাতীয় পতাকাকে পোশাক হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে না এবং গায়ে জড়িয়ে রাখা যাবে না। তবে পূর্ণ সামরিক মর্যাদা বা পূর্ণ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করা হলে তার শবযাত্রায় জাতীয় পতাকা আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের পতাকার ঊর্ধ্বে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। যেকোনো স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। যারা আইন অনুযায়ী গাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অধিকারী তাদেরও কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। মোটরযানে পতাকা ওড়ানোর ক্ষেত্রে এর সামনে থাকা দণ্ডায়মান রেডিয়েটর ক্যাপে বেঁধে ওড়াতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জাতীয় পতাকা পরিবহনের পিছনে উত্তোলন করা যাবে না। মোটরগাড়ি, নৌযান, উড়োজাহাজ ও বিশেষ অনুষ্ঠান ব্যতীত অন্য সময় পতাকা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উত্তোলিত থাকবে এবং সূর্যাস্তের পর কোনো মতেই পতাকা উড্ডীয়ন অবস্থায় থাকবে না। কোনো দেয়ালে দণ্ডবিহীন পতাকা প্রদর্শিত হলে তা দেয়ালের সমতলে এবং রাস্তায় প্রদর্শিত হলে উলম্বভাবে দেখাতে হবে। গণমিলনায়তন কিংবা সভায় পতাকা প্রদর্শন করা হলে বক্তার পেছনে ও ঊর্ধ্বে স্থাপন করতে হবে। পতাকা এমনভাবে উত্তোলন, প্রদর্শন বা মজুদ করা যাবে না, যাতে এটি সহজেই ছিঁড়ে যেতে পারে, মাটি লাগতে পারে বা নষ্ট হতে পারে। পতাকার অবস্থা ব্যবহারযোগ্য না হলে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করতে হবে। অনুমতি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকাকে ট্রেডমার্ক, ডিজাইন বা পেটেন্ট হিসেবে ব্যবহার করাও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীত গাইতে হবে। যখন জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং প্রদর্শিত হয় তখন উপস্থিত সবাইকে পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। জাতীয় পতাকার অবমাননা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।##