চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে জমকালো আয়োজনে ক্লিক’র চট্টলার বীর ও তারুণ্যের কাণ্ডারি সম্মাননা অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়েছে। বিজয়ের মাসের প্রথম দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাইফস্টাইল ও বিজনেস ম্যাগাজিন ক্লিক’র মোড়ক উম্মোচনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ক্লিক’র প্রধান সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার) মাহমুদা বেগম।
ক্লিক’র সহকারী সম্পাদক আরাফাত রূপকের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লিক সম্পাদক জালালউদ্দিন সাগর। অনুষ্ঠানে পাঁচ গুনীজনকে চট্টলার বীর ও সাত তরুণকে তারুণ্যের কাণ্ডারি সম্মাননা দেওয়া হয়।
চট্টলার বীর সম্মাননা প্রাপ্তগুণীজন হলেন- একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, পিএইচপি ফ্যামেলি’র চেয়ারম্যান আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, শিক্ষাবিদ, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি’র উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান, শিশু সংগঠক ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, রাজনীতিবিদ. চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম, লেখক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে তারুণ্যের কাণ্ডারি সম্মাননা পেয়েছেন সাতজন। তাঁরা হলেন- ডা. মো. জয়নাল আবেদীন (মুহুরী চিকিৎসক ও সমাজসেবক) , সৈয়দ শামসুল তাবরীজ (পেশাজীবী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা), রাশীদ মোহাম্মদ চৌধুরী (শিল্পোদ্যোক্তা), সাংবাদিক ঋত্বিক চৌধুরী নয়ন, মোহাম্মদ জালাল হোসেন, ব্যবসায়ী ও সংগঠক, উদ্যোক্তা মানবুবা আইমান মার্জিয়া ও উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান রুমান।
স্বাগত বক্তব্যে ক্লিক সম্পাদক জালালউদ্দিন সাগর বলেন, যাঁরা আমাদের এই আয়োজন দেখতে প্রতি বছর আসেন তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আরও শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই আজকের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দদের। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ক্লিক পরিবার চট্টলার বীর ও তারুণ্যে কাণ্ডারিদের সম্মাননা দিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত ৫২ গুণীজন চট্টলার বীর সম্মাননা পেয়েছেন। সম্মাননা দেওয়া হয়েছে পঞ্চাশেরও অধক তরুণ্যকে। আজকের দিন পর্যন্ত যাঁদেরকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাঁরা কতটুকু সম্মানিত হচ্ছেন তা জানিনা তবে তাঁদের করতে
তিনি আরও বলেন, ক্লিক পরিবার সম্মানিত হচ্ছেন বিধায় আজকের গুণীজনরা সম্মাননা নিচ্ছেন। তাঁরা আত্মবিশ্বাস রাখেন , একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে সুন্দর অনুষ্ঠানে ক্লিক পরিবার সম্মাননা দেন। আজকেও আমরা চেষ্টা করেছি সেই আয়োজন আপনাদের উপহার দিতে। আপনাদের সকলের সহযোগীতা ও ভালোবাসায় প্রতিবছর ক্লিক’র ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে।
প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ক্লিক পরিবারের আজকের এই আয়োজন তরুণ উদ্যোক্তাদের অগ্রসরতার অনুপ্রেরণা যোগাবে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে আছেন তাঁদেরও। আমি এই অয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে আসলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আজকে আয়োজক কমিটি, ক্লিক পরিবার, চট্টলার বীর সম্মাননা পাওয়া গুনীজন ও তারুণ্যের কাণ্ডারি সম্মাননা পাওয়া তরুণরাসহ উপস্থিত সকলের প্রতি আন্তরিক অভিবাদন জানাচ্ছি। ভবিষ্যতেও ক্লিক পরিবারের এমন আয়োজন সকল শ্রেণির মানুষকে আনন্দিত করবে, শেখাবে, অনুপ্রেরণা যোগাবে এটাই কামনা করছি।
চট্টলার বীর সম্মাননাপ্রাপ্ত আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ক্লিক পরিবারের চটলার বীর ও তারুণ্যে কাণ্ডারি সম্মানার আয়োজন খুবই সুন্দর এবং প্রশংসনীয়। আজকে তরুণেরাও উপস্থিত আছেন। আমার কাছে প্রায় সময় অনেকে জানতে চান জীবনে বড় হওয়ার সুত্র। আমি আজকে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপস্থিতি সকলকে বলতে চাই, জীবনের গভীরে বড় হওয়ার যে প্রতিভার বীজ তা ধার করা যায় না, তাকে দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না। প্রত্যেক মানুষের জীবনের যে বীজ প্রথিত রয়েছে সেই বীজ ঘুমন্ত রয়ে গেছে। জীবনে বড় হতে হলে আমাদেরকে সেই ঘুমন্ত বীজ জাগ্রত করতে হবে। মহাবিশ্বে মহাদশে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রমাণ করতে চাই আমরা পারি, আমরা সব কিছু পারি। নয় মাসে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তা আর কেউ পারে নাই। আমরা বাঙ্গালিরা পেরেছি। বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু আজ পদ্মার বুকে তৈরি সেতুতে গাড়ি চলে, আমরা বাঙ্গালিরা পেরেছি। কাজের সময় ধরে কাজ করলে জীবনে বড় হওয়া যাবে না। বড় হতে হলে আমরা যে যেই কাজ করিনা কেন নির্দিষ্ট সময়ের বাহিরে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি’র উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, আমার স্বাস্থ্যগত কারণে আমাকে কেউ বীর বলবেনা এবং এই বয়সে এসে আমাকে বীর সম্মাননা পাওয়ায় ক্লিক পরিবারকে চিরকৃতজ্ঞতা জানাই। একই সাথে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ যারা উপস্থিত হয়েছেন। ক্লিক পরিবারের অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত প্রান্তবন্ত একটি অনুষ্ঠান, শেখার অনুষ্ঠান। আজকে অতিথিদের কথাগুলো অনেক মূল্যবান শিক্ষণীয়, যা মঞ্চে উপবিষ্ট তারুণ্যের কাণ্ডারিসহ এই অনষ্ঠান উপভোগ করতে যারা এসেছেন তাদের সফতার প্রদীপ। আমি ক্লিক’র এই আয়োজন তরুণ প্রজন্মদের অগ্রসরতার জন্যা ধারাবাহিকতা কামনা করছি।
শিশু সংগঠক ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, আজকে যাঁরা চট্টল বীর হিসেবে আজ পরিচিত হয়েছেন এবং যাঁদের ওপর আমার সবচেয়ে বেশি ভরসা তারুণ্যের কাণ্ডারি সবাইকে শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি তারুণ্যের কাণ্ডারিদের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা যা কিছু অর্জন করেছি তা এরা ধরে রাখবে, যা কিছু হারিয়েছি তা এরা পুনরুদ্ধার করবে এবং আমরা দেশটাকে যেখানে রাখতে পেরেছি তা তারা অনেক ওপরে নিয়ে যাবে। ক্লিক’র এমন সুন্দর আয়োজন উপহার দেওয়ার জন্য ক্লিক পরিবারকে মোবারকবাদ জানাই। তাদের এই পথ চলা তরুণদের সঠিক পথ দেখাবে এবং সঠিক পথে পরিচালিত হতে দিক নির্দেশনা দিবে।
লেখক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি পরিকল্পিত ও প্রাণবন্ত একটি অনুষ্ঠান। আজকে যাঁরা আমাকে বীর হিসেবে সম্মাননা দিয়েছেন আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে গ্রহণ করলাম এবং ভবিষ্যতে আমরা প্রত্যেকে নিজ দায়িত্বে এই পেশার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
প্রধান সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, সবাই মরোত্তর সম্মাননা দেয় কিন্তু আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম চট্টলার বীর ও তারুণের কাণ্ডারি সম্মাননা দেওয়ার। ২০১৫ সাল থেকে শুরু করা এই সম্মাননা অনুষ্ঠানটি আপনাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় আজও বেঁচে আছে। আপনাদের চাওয়া থাকলে এই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে।
সম্মাননা প্রদান শেষে সৃজশীল নৃত্য,ফ্যাশন শোসহ নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় লাইফস্টাইল অ্যান্ড ফ্যাশন ম্যগিাজিন ক্লিক’র বর্ণাঢ্য এই আয়োজন।