দলীয় নেতাদের অবহেলায় নিস্ক্রিয় হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগের তৃণমূল নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় করতে উদ্যেগ নিয়েছেন তৃণমূলের সাবেক কিছু নেতা। তারা ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যন্ত নিস্ক্রিয় হয়ে যাওয়া নেতা কর্মী ও সমর্থকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সুসংগঠিত করার কাজ করবে। দলীয় সভানেত্রীর হাতকে মজবুত করতে তাদের এ প্রয়াস।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক নিস্ক্রিয় তৃণমূল নেতা কর্মী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর রিয়াজুদ্দিন বাজার ওয়ার্ডের যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সকির আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ত্যাগী ও যোগ্য কর্মীরা আজ হারিয়ে যাচ্ছে, মূল্যায়ন বাড়ছে অনুপ্রবেশকারীদের। তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুর্দিনে যারা ত্যাগীর ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হতেন দল ক্ষমতায় থাকার পরেও তাদের অনেকের এখন চলছে দুর্দিন। সুযোগ সন্ধ্যানী, অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড মার্কা নেতাদের দাপটে আমরা এখন কোণ্ঠাসায়। হারিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের তৃণমূল আওয়ামী লীগের যোগ্য কর্মীরা। আমরা চাই প্রিয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠন এগিয়ে যাক, শক্ত হোক। সুবিধাবাদী মুক্ত হোক।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক হিংসাত্বক মনোভাবের কারণে তৃনমূলে থাকা ত্যাগী নেতাকর্মীরা আজ হারিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলন সংগ্রামে যারা দলের কাজ করে নাই, বিভিন্ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তদের দলে মূল্যায়ন বেশি হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোন মূল্যায়িত হয়নি হাইব্রিড নেতাদের কারণে। অথচ দলের জন্য পূর্বে কোন ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস নেই এসব সুবিধাবাদীরা দলীয় পদবি ব্যবহার করে ফায়দা লুটে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে দলকে ভালোবেসে, জীবন বাজি রেখে দলের হয়ে কাজ করেছি। আমি ছগির আহমদ চট্টগ্রাম নগরের বৃহত্তর রেয়াজউদ্দিন বাজার ইউনিট যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, আজ দলের কোন পদপদবী নেই। অবহেলা ও প্রতারণার শিকার হয়েছি কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার কাছ থেকে। আমি ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারী লালদিঘী সমাবেশ (গণহত্যা, নব্বই-এর স্বৈরাচার এরশাদ পতন আন্দোলন, লালাদিঘীতে গোলাম আজমের সমাবেশ প্রতিরোধ, ১৯৯৬ এর ১৫ই ফেব্রুয়ারী বিএনপি’র একতরফা নির্বাচন প্রতিহত, ১৯৯৬ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ২০০১-২০০৭ পর্যন্ত বিএনপি জোট বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহেলা ও নানা কারণে এখন নিজেকে নিস্ক্রিয় রেখেছি দলীয় কর্মকান্ড থেকে। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে আমিসহ শত শত বঞ্চিত তৃণমূল নেতা কর্মী কাজ করবো। পদ পদবীহীন এক ঝাঁক সাবেক নেতা কর্মী সক্রিয়ভাবে সাংগঠনিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবো। যারা দলের অবমুল্যায়নের ফলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল, তারা আবারও জাগবে।
তিনি বলেন, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আমি সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন চেয়েছিলাম। তৃণমূল নেতা হিসেবে আশা করেছিলাম দলীয় সমর্থন পাব। কিন্তু সমর্থন পায়নি। ২০১৬ সালেও একইভাবে সমর্থন চেয়েছিলাম। কিন্তু উল্টো আওয়ামীলীগের সমর্থন পেয়েছেন জামায়াতের বড় অর্থ জোগানদাতা নূর আহমদ। এতে টাকার কাছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল রাজনীতি পরাজিত হয়।
সকির আলম বলেন, আমাদের দলীয় নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম দেশে পরিণত হয়েছে। তিনি আজ বিশ্বনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাঁকে অনুকরণ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দরা। তাঁর ত্যাগকে ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের তৃনমূলে ঝরে পড়া নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিতে রূপান্তর করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন গত ১১ বছরে দলের প্রায় ১০ লাখ তৃনমূল কর্মী দল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কেন এরা দল থেকে দূরে সরে গেলো এর জবাব আওয়ামী লীগের নেতাদের অবশ্যই দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূলের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
এরমধ্যে বিভাগে বিভাগে সমাবেশ করা হবে। একটি কমিটি করা হবে ওয়ার্ড থেকে থানা পর্যন্ত। প্রতি ওয়ার্ডে ২১ জন থেকে ৩১ জন থাকবে। ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডে ১ জন করে দূত নিয়ে ১১ জনের একটি ইউনিয়ন কমিটি করা হবে। প্রতি থানায় ৩১ জনের একটি থানা কমিটি হবে। সেখানে প্রতি ইউনিয়ন থেকে একজন দূত থাকবে। জেলা কমিটি হবে ৫১ জনের। ৬৪ জেলা কমিটি থেকে একজন সদস্য করে ৬৪ জনকে নিয়ে ১০১ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি হবে। সভাপতি সেক্রেটারি থাকবে না। একজন করে দূত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর রিয়াজুদ্দিন বাজার ইউনিটের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নুরুল আকবর, নুরুল ইসলাম সোনাকানিয়া ইউনিয়ন সভাপতি,
মাস্টার দেলোয়ার হোসেন, আহমদ হোসেন, মাহমুদুর রহমান প্রমূখ।