ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় “দানা”। এটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে দানা স্থলভাগে আছড়ে পড়বে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অফিস। সমুদ্রে ইতোমধ্যেই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে ওড়িশা রাজ্যের ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে এই ঘূর্ণিঝড় পারাদ্বীপ থেকে ৩০০ কিলোমিটার এবং সাগরদ্বীপ থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দূরে আছে। ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে তা এগিয়ে আসছে। এই গতিবেগ আরও বাড়তে পারে।
ল্যান্ডফল বা স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড় দানার ফলে পূর্ব মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বা তার থেকে বেশি জোরে ঝড় বইতে পারে। তাই পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড় ও বৃষ্টি নিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হবে। সেখানেও বৃষ্টি ও বন্যা নিয়ে রেড অ্যলার্ট জারি করেছে প্রশাসন। কলকাতাতেও ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে।
কলকাতাসহ ৯ জেলায় ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ ঘো ষণা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এক লাখ ১৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া বন্ধ আছে। দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুরের মতো জায়গা থেকে পর্যটকদের চলে যেতে বলা হয়েছে।
দিঘায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
ট্রেন ও বিমান বাতিল
ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ১৯০টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ১৪ ঘণ্টার জন্য এই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একাধিক দূরপাল্লার ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে।
কলকাতা বিমানবন্দর ১৫ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কোনো বিমান কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ছাড়বে না বা নামবে না। তবে কলকাতা মেট্রো পরিষেবায় ঝড়ের প্রভাব পড়বে না বলে জানানো হয়েছে। ফলে মেট্রো তার সময় অনুযায়ী চলবে।
এদিকে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি জানিয়েছেন, রাজ্যের ১৪টি জেলায় দানার প্রভাব পড়বে। সরকার ১০ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ওড়িশায় ১৪টি জেলায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৫ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পুরীসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থানগুলো পর্যটকশূন্য করে দেওয়া হয়েছে। পুরীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যের ভেতর থেকেও প্রচুর বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে আসেন। ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বয়স্কদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কটক হাইকোর্ট, ভিতরকণিকা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুযারি, নন্দনকানন জু, সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ, গ্রন্থাগার, আর্কাইভ, যাদুঘরও বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বন্ধ থাকবে।