রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তৃতীয় দফার সংলাপের প্রথম দিন শনিবার (৫ অক্টোবর) বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংলাপের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সংলাপে বিএনপি আবারও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে বলে জানিয়েঝেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, নির্বাচন করা অন্তর্বর্তী সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার বলে প্রধান উপদেষ্টা তাদের জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, সংলাপে জামায়াতে ইসলাম দুটি রোডম্যাপ চেয়েছে বলে জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক ঘণ্টা সময় ধরে আলোচনা করেন। প্রধান আলোচনা ছিল নির্বাচন–সংক্রান্ত এবং নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার ও কমিশন নিয়ে।
সংলাপে আবারও নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি তুলে ধরার কথা উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “আমরা একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। কবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি।”
জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে দেওয়ার যে আইন করা হয়েছে বিগত সরকারের সময়ে, সেটিও বাতিল চেয়েছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল জানান, বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে না থাকে, সেটিও তারা চেয়েছেন। ফ্যাসিবাদের সময় গঠিত সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
বিএনপির মহাসচিব জানান, ২০১৪ সাল থেকে পরপর তিনটি বিতর্কিত ও ভুয়া নির্বাচন করেছে যেসব নির্বাচন কমিশন, সেই কমিশনগুলোর প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন তারা।
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি, বিচারপতি খায়রুল হক নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মূল হোতা। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দিয়ে এই বিচারপতি নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংসের মূল ভূমিকা পালন করেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অনেকে দোসর হয়ে কাজ করেছে এবং লুটপাট ও মানুষের ওপর নির্যাতনে সহায়তা করেছে।” এছাড়া গুম–খুন ও গণহত্যায় সহায়তাকারীদের অনেকেই এখনো নিজ নিজ জায়গায় বহাল আছে, অবিলম্বে তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সেসব পদে নিয়োগ করার দাবিও তারা জানিয়েছেন।
সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপির অন্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এতে সরকারের দিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
এদিকে, সংলাপ শেষে জামায়ত আমির বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি রোডম্যাপ চেয়েছি। একটি সংস্কারের ও অন্যটি নির্বাচনের। সংস্কার ও নির্বাচন দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।”
এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, “আগামী ৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত দলীয় সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরবে। শুরু থেকেই আমরা বলছি, সরকারকে সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে হবে। যৌক্তিক সময় কতটা তা নিয়ে ৯ অক্টোবর মুখ খুলব।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আজকের সংলাপে আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে কথা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ পূজায় নিরাপত্তা দেবে। আশা করি, অভূতপূর্ব সুন্দর পূজা হবে।”
সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলোর কয়েক সদস্যের আপত্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা দলগতভাবে অবগত নই।”
তিনি আরও বলেন, “এ সরকার একটা নির্দলীয় সরকার। তারা দেশ শাসনে আসেনি। দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য এসেছেন। তাদের কাজ সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করা। কিছু মৌলিক বিষয়ে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন, তা ৯ অক্টোবর জানাব।”
ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, আ ন ম শামসুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম প্রমুখ।