চলতি সপ্তাহের কিয়েভের হামলার জবাবে রাশিয়া একটি নতুন মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এ সপ্তাহে আমেরিকান ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার রাশিয়ার গভীরে আঘাত করে ইউক্রেন।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে অক্ষম হবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে দশ গুণ বেশি গতিতে উড়তে পারে। এটি তিনি ‘ওরেশনিক’ নামে অভিহিত করেছেন, যা রাশিয়ান ভাষায় হ্যাজেলনাট গাছের প্রতিশব্দ।”
তিনি আরও বলেন, “ইউক্রেনের যেসব মিত্র তাদের ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে হামলা করতে ব্যবহার করে, তাদের বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।”
পুতিন বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, দেশগুলো আমাদের স্থাপনার বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেয়, তাদের সামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার আমাদের রয়েছে।”
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি মাসে ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সীমিত পরিসরে আঘাত হানতে মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেওয়ার পর প্রথম মন্তব্যে পুতিন এ কথা বলেন।
পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাব্রিনা সিং জানান, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রটি নতুন, পরীক্ষামূলক ধরনের মধ্যম-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যা তাদের আরএস-২৬ রুবেজ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রচলিত বা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে উল্লেখ করে সিং বলেন, “এটি নতুন ধরনের প্রাণঘাতী সক্ষমতাসম্পন্ন। তাই এটি অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।”
তিনি বলেন, “পরমাণু ঝুঁকি হ্রাস চ্যানেলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছিল।”
মঙ্গলবার ও বুধবার রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে কিয়েভের দূরপাল্লার মার্কিন ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জবাবে ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ডিনিপ্রোতে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান পুতিন।
তিনি বলেন, “এসব হামলায় রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের একটি গোলাবারুদ গুদামে আগুন লাগে। কুরস্ক অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন কর্মী নিহত ও আহত হন।”
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “আগ্রাসী পদক্ষেপ বাড়লে আমরা সিদ্ধান্তমূলক ও সদয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব। যেসব পশ্চিমা নেতারা মস্কোর বিরুদ্ধে তাদের বাহিনী ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন, তাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করা উচিত।”
পুতিন বলেন, “বৃহস্পতিবার ওরেশনিকের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি দিনিপ্রোর একটি সুপরিচিত ক্ষেপণাস্ত্র কারখানায় আঘাত হেনেছে। তিনি আরও বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ওরেশনিকের সঙ্গে আরও হামলা চালালে রাশিয়া আগাম সতর্কতা জারি করবে- যা আগের বিমান হামলার আগে মস্কো করেনি।”
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ প্রাথমিকভাবে বলেন, “নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়ে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেনি। কিন্তু পরে তিনি কৌশল পরিবর্তন করে বলেন, উৎক্ষেপণের ৩০ মিনিট আগে মস্কো একটি সতর্কতা জারি করেছিল।”
স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেন দাবি করেছে দিনিপ্রো হামলায় রাশিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এতে দু’জন আহত হয়েছে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।