সাভারের আশুলিয়া থানায় জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে করা মামলার বাদিসহ ৩ জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। বাদির দাবি, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে দিয়ে মামলাটি করানো হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে বাদিকে কক্সবাজার থেকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
বাদিরা হলেন- কুলসুম আক্তার (২১) মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার সিংজুরীর আব্দুল খালেকের মেয়ে। অপর দুজন হলেন- মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার মৃত মাসুম আলীর ছেলে রুহুল আমিন (৬৪), একই জেলার শিবালয় থানার টেপড়া এলাকার মৃত মনসের আলীর ছেলে শফিউদ্দিন (৪০)।
মামলার বাদি কুলসুম বেগম জানান, স্বামী মো. আল আমিনের সঙ্গে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় থাকতেন তিনি। আল আমিনের পিতা নূরনবী ও মায়ের নাম কমলা বেগম। ২৮ আগস্ট তিনি সিলেট থেকে মানিকগঞ্জ চলে আসেন। পরে চাকরির খোঁজ করতে থাকেন তিনি। বাসে শফিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। কথাবার্তার একপর্যায়ে শফিউদ্দিনকে চাকরি প্রয়োজন বলে জানান কুলসুম। একথা শুনে কুলসুমকে মোবাইল ফোন নম্বর দেন শফিউদ্দিন। এর কিছুদিন পর কুলসুমের চাকরি হয়েছে জানিয়ে জন্মনিবন্ধন ও চেয়ারম্যান কর্তক প্রত্যয়ণ সার্টিফিকেট দিতে বলেন তিনি৷ এর কিছুদিন পর ঢাকায় নিয়ে ৫ আগস্ট এক ব্যক্তির নিহতের ঘটনার মামলায় কুলসুমকে বাদি করা হয়েছে বলে জানান শফিউদ্দিন ও রুহুল আমীন এবং কুলসুমকে নিহত ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে সকলের কাছে পরিচয় দিতে বলেন অন্যথায় কুলসুমের ফাঁসি হবে বলে জানান। পরে আদালতে নিহত ব্যক্তি তার স্বামী বলে জানান। এরপর থেকে তারা কুলসুমকে কক্সবাজার নিয়ে রাখেন। কুলসুম একবার বাড়ি ফিরলেও পরে শফিউদ্দিন ও রুহল আমীন আবারও তাকে কক্সবাজার নিয়ে যান। পরে আশুলিয়া থানা পুলিশ কুলসুম, রুহুল আমীন ও শফিউদ্দিনকে হেফাজতে নেন।
কুলসুম বেগম বলেন, “চাকরির প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে আমাকে মামলার বাদি করা হয়। আমি আসামী কাউকে চিনিও না। কে মারা গেছে আমি জানিও না।”
শফিউদ্দিন বলেন, “বাসে কুলসুমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার চাকরির প্রয়োজন জানালে মোবাইল ফোন নম্বর দেই। চাকরির সুবাদে রুহুল আমিনের সঙ্গে কুলসুমকে পরিচয় করিয়ে দেই। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”
এদিকে কুলসুমকে থানায় আনা হয়েছে জানতে পেরে মামলার আসমি লিয়াকত দেওয়ান নামে এক ব্যক্তি থানায় উপস্থিত হন। মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা বলে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “আমি ওই মামলার ৫৭ নম্বর আসামি। একটি মাধ্যমে জানতে পারি এঘটনায় রুহুল জড়িত। পরে রুহুলের ছেলে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একজনের মাধ্যমে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা চায়। পরে আমরা ১১ জন মিলে ১৭ লাখ টাকা দিয়েছি।”
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “মামলার বাদিসহ আরও দুজনকে কক্সবাজার থেকে আশুলিয়া থানায় আমাদের হেফাজতে আনা হয়েছে। বাদিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম (২১) তার স্বামী মো. আল আমিন মিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। পরে এটি ৮ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হয়।