কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে গত এক বছরে অন্তত চারটি বন্যহাতির মৃত্যু ঘটেছে। সর্বশেষ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে উখিয়া রেঞ্জের সদর বিটের আওতাধীন দোছড়ি রফিকের ঘোনা এলাকায় একটি হাতির মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, মৃত হাতিটির মুখ দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুতায়িত ফাঁদে হাতিটি মারা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, খাদ্য সংকটের কারণে হাতির পাল প্রায়ই ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ে। এতে আতঙ্কিত হয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে হাতি হত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, যা জীববৈচিত্রকে ভয়াবহ সংকটে ফেলছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতি ও বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ায় মানুষ-হাতির সংঘর্ষ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে হাতি হত্যায় জড়িত হচ্ছে, যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে গুরুতর অপরাধ।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মৃত হাতিটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ময়নাতদন্ত শেষে আলামত সংগ্রহ করেছেন, যা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। পরে হাতিটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।’
দোছড়ি বিট কর্মকর্তা ইমদাদুল হাসান রনি জানান, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে বন বিভাগের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাতির মৃতদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হাতিটি বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি টেকনাফে একটি মা হাতি বাচ্চা জন্মের সময় মারা যায়। একই বছরের কিছুদিন পর টেকনাফের হ্নীলা বিটের পাহাড়ি ছড়ায় আরেকটি হাতির মরদেহ পাওয়া যায়। এ ছাড়া উখিয়ার জুমছড়ি এলাকায় প্রায় ৩৫ বছর বয়সী একটি পুরুষ হাতি হত্যার শিকার হয়। সর্বশেষ উখিয়ার দোছড়ি বিট এলাকায় রহস্যজনকভাবে আরেকটি হাতির মৃত্যু হলো।
প্রকৃতি ও পরিবেশবাদী সাংবাদিক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে বন্যহাতির মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। খাদ্যাভাব দূরীকরণ, নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র সংরক্ষণ ও স্থানীয় জনগণকে সচেতন না করলে ভবিষ্যতে হাতিসহ বন্যপ্রাণী হত্যার সংখ্যা আরও বাড়বে।’