মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিস’ জারির আবেদন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৪

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করতে আদালতে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ মহানগর বিশেষ জজ মো. আবদুর রহমানের আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে এই আবেদন করা হয়।

দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুদকের একটি মামলায় তারা আসামি। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছে।’

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান, ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী, বোন রোকসানা জামান চৌধুরী ছাড়াও ইউসিবিএল ব্যাংক ও আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তাদের আসামি করা হয় সেখানে।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে আরামিট পিএলসির এজিএম মো. আব্দুল আজিজ এবং তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় আরামিট পিএলসির আরেক এজিএম উৎপল পালকে বুধবার রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও আবেদন করা হয়েছে বলে অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন জানিয়েছেন।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে নাম সর্বস্ব ‘ভিশন ট্রেডিং’ নামে একটি কোম্পানির কাগজ তৈরি করে গম, মটর, হলুদ, ছোলা আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয় ইউসিবিএল ব্যাংক চট্টগ্রামের পোর্ট শাখা থেকে।

সেই টাকা আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে তৈরি করা আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে আলাদা চারটি কোম্পানির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই টাকা পাচার করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আরামিট গ্রুপের প্রটোকল অফিসার ফরমান উল্লাহ চৌধুরীরকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে মিথ্যা তথ্যে ‘ভিশন ট্রেডিং’ নামে একটি কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স করা হয়। সেটি ব্যবহার করে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রামের পোর্ট শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলা হয়।

পরের বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই কোম্পানি গম, হলুদ, ছোলা ও মটর আমদানির কথা বলে ১৮০ দিনের জন্য টাইম লোনের আবেদন করে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রাহকের ব্যবসা, মালিকানা, পণ্য, গুদাম, ব্যাংক পারর্পমনেন্স ইত্যাদির মিথ্যা তথ্যে ‘সন্তোষজনক’ প্রতিবেদন দাখিল করে ১৮০ দিনের জন্য ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল’ হিসেবে ২৫ কোটি টাকা ঋণের সুপারিশ করে তা ব্যাংকের কর্পোরেট ব্যাংকিং ডিভিশনে পাঠায়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ইউসিবিএল ব্যাংকের ‘করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশন ও ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ওই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল।

তারপরও ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ‘কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে’ ঋণ অনুমোদন করে। ঋণের টাকা ‘নাম সর্বস্ব’ চার কোম্পানির ব্যাংক হিসেবে পে অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। পরে তা নগদে উত্তোলন করা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, মো. জোনাইদ শফিক, অপরূপ চৌধুরী, তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান, ইউনুছ আহমদ, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সবুর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী।

ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ, আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবদুর রউফ চৌধুরী, জিয়াউল করিম খান, মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন ও বজল আহমেদ বাবুলও এ মামলার আসামি।

জাবেদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী, কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম, মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম, আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, ইয়াছিনুর রহমান, ইউছুফ চৌধুরী ও সাইফুল ইসলামকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথম মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরের মেয়াদে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

২০২৪ সালের অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর জাবেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ইতিমধ্যে জাবেদ ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তিসহ অন্যান্য দেশে স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।

এছাড়া গত ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেয় আদালত। এসব হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি জমা আছে।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত জাবেদ ও রুকমিলার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে তারা দুজনেই বিদেশে আছেন বলে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে।

ভিডিও