উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সংস্থা ব্রিকস তাদের মধ্যকার লেনদেন থেকে ডলার বাদ দেয়ার দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ হিসেবে ‘ব্রিকস পে’ নামক লেনদেন ব্যবস্থা উদ্বোধন করেছে।
ব্রিকস গ্রুপ তার সদস্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজতর করার জন্য একটি স্বতন্ত্র আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থাকে একটি বড় পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। বার্তা সংস্থা মেহরের বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর সাম্প্রতিক সম্মেলনে ‘ব্রিকস পে’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, ডলারমুক্ত লেনদেন, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করা এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব হ্রাস করার ক্ষেত্রে এই প্ল্যাটফর্ম অনন্য ভূমিকা পালন করবে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ব্লক চেইনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ‘ব্রিকস পে’ পরিচালিত হবে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং খাতে যোগাযোগের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা সুইফটের শক্তিশালী বিকল্পে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা এটির থাকবে।
রাশিয়ার সংসদের উচ্চকক্ষ রুশ ফেডারেশন কাউন্সিলের সভাপতি ভ্যালেন্তিনা মাতভেঙ্কো এ সম্পর্কে দাবি করেছেন, ব্রিকস পে সঠিক পথে এগুচ্ছে। তিনি বলেন, এই আর্থিক ব্যবস্থা এতদিন স্বপ্ন ও পরিকল্পনা আকারে থাকলেও এখন তা বাস্তবরূপ লাভ করেছে।
মাতভেঙ্কো আরো বলেন: উন্নয়নশীল যেসব দেশ নিজেদেরকে মার্কিন ডলারের আধিপত্য থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিল এই আর্থিক ব্যবস্থা তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ এই আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। এসব দেশের বেশিরভাগ এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাতিন আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপের দেশ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ সম্পর্কে বলেছেন, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো বর্তমানে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আর্থিক তথ্য লেনদেনের একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রধানদের এক সম্মেলনে বলেন: এই ব্যবস্থা আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তথ্য আদান প্রদানের জন্য নিরাপদ নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচিত সুইফটের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
এর আগে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মাদ রেজা ফারজিন জানিয়েছিলেন, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের বড় বড় কিছু চুক্তি সই হয়েছে। তিনি জানান, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে লেনদেনে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজ নিজ জাতীয় মুদ্রা ব্যবহার করতে চায়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থা বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে জানিয়ে ফারজিন বলেন: পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ নয়া ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে চায়। ব্রিকস তাদের সে চাহিদা পূরণ করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পার্সটুডে