বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি পুনর্বহালের দাবি

বাংলাদেশের পাসপোর্টে পুনরায় ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ (ইসরাইল বাদে) শব্দ দুটি পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছে ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশন। একইসঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক কোন্‌ পর্যায়ে আছে সেটিও জানানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশে জায়নবাদী আগ্রাসন: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব দাবি তুলে ধরেন।

ফিলিস্তিন ওলামা পরিষদের বাংলাদেশি কো-অর্ডিনেটর এবং ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মুহাইমিনুল হাসান রিয়াদ বলেন, আগ্রাসন বলতে আমার বাংলাদেশে জায়নবাদীদের পক্ষে কিছু ঘটনা প্রবাহকে বুঝি। ইসরাইল কুটনৈতিক অপতৎপরতার বড় অস্ত্র হল পেগাসাস স্পাইওয়্যার আর বাংলাদেশ ইজরায়েল থেকে (তৃতীয় পক্ষ ব্যবহার করে) মোবাইলে আড়িপাতার এই যন্ত্র কিনেছে। এছাড়াও নানা মাধ্যমে এনটিএমসি বিভিন্ন প্রযুক্তি ক্রয় করেছে এবং সেগুলো ব্যবহার করতে ইজরায়েলি সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের সেনাকর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আবার দেশের পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি বাতিল করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সূচকে দেশের পাসপোর্টের মান বৃদ্ধির মিথ্যা অজুহাত দিলেও পরে দেখা যায় আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান আরও কমেছে।

মুহাইমিনুল হাসান রিয়াদ আরও বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য জনমনে আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে ফিলিস্তিনের মানচিত্রকে ইসরাইলের মানচিত্র বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সামরিক এইড পাঠানোর প্রস্তাব করেছিল ইসরাইল। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ১৯৭২ সালের প্রথম দিকেই স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ইসরাইল। কিন্তু তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ তা প্রত্যাখ্যান করে চিঠি রিলিজ করেন। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের সাথে ইসরাইল সম্পর্ক কোন পর্যায়ে আছে তা বের করা, কেন পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ (ইসরাইল বাদে) শব্দ দুটি বাতিল করা হয়েছিল তার জবাব রাষ্ট্র থেকে আদায় করা, পাসপোর্ট  ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি পুনর্বহাল করতে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করার আহ্বানও জানিয়েছেন মুহাইমিনুল হাসান রিয়াদ ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ইতিহাসে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের এক মারাত্মক অধ্যায়। এই সংঘাতের মূল কারণ ফিলিস্তিনিদের ভূমি অধিকার, ইসরাইলের সামরিক উপস্থিতি এবং উভয় পক্ষের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান, বিমান হামলা এবং স্থল হামলা বহুবার সংঘটিত হয়েছে, যা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। অথচ গাজা উপত্যকা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের একটি অংশ। যা ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, ২০০৫ সালে ইসরাইল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করলেও গাজা কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের আগ্রাসন চলমান থাকায় সেখানে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের ফলে গাজার জনগণ ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে। বহু মানুষ মারা গেছে, যার মধ্যে অসংখ্য নারী ও শিশু রয়েছে। বাড়িঘর ধ্বংস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল ধ্বংস হওয়া, এবং জল-বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে ফিলিস্তিনিরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ইসরাইলের গাজায় হামলা বিশ্বব্যাপী নিন্দনীয় হলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশ ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। স্থায়ী শান্তি এবং মানবিক সংকটের নিরসনের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সুসংগঠিত আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।