চট্টগ্রামের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা ৩৫০ বছরের পুরনো আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মোঘল স্থাপত্যের এক জীবন্ত নিদর্শন। এবার এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নতুনভাবে রূপ নিচ্ছে— পবিত্র মসজিদে নববীর আদলে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদ পুনর্নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পে নতুন করে নির্মিত হবে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এক স্থাপনা, যেখানে নামাজ আদায় করতে পারবেন ১৪ হাজারেরও বেশি মুসল্লি।
১৬৬৬ সালে মোঘল আমলে নির্মিত আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে ইসলামী সংস্কৃতি ও ধর্মচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো অংশের পলেস্তরা খসে পড়া, দেয়ালের ক্ষয়প্রাপ্তি ও জায়গার সংকুলান নিয়ে মুসল্লিদের ভোগান্তি বাড়ে।
স্বাধীনতার পর সর্বশেষ সংস্কার হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। এরপর বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও পূর্ণাঙ্গ পুনর্নির্মাণ সম্ভব হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ধর্ম উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া চট্টগ্রামের সন্তান ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে মুসল্লি পরিষদের নেতারা বিষয়টি উপস্থাপন করলে দ্রুত নকশা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
নতুন নকশা প্রণয়ন করেছে ঢাকার এইজ অ্যান্ড এইজ আর্কিটেকচার স্টুডিও। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান স্থপতি সাদিকুল বাশার ও সাবরিনা আফতাব জানান, পুরো স্থাপনাটি নকশা করা হয়েছে মদিনার পবিত্র মসজিদে নববীর আদলে, যেখানে মোঘল ঐতিহ্য ও আধুনিক স্থাপত্যের এক সুষম সমন্বয় ঘটেছে।
নতুন স্থাপনায় থাকবে— দুই তলা বিশিষ্ট বেসমেন্ট ফ্লোর, ছয় তলা বিশিষ্ট মূল ভবন, ২০ তলা উচ্চতার টাওয়ার, ৫০০ নারী মুসল্লির জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য কিডস জোন, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ প্রবেশপথ, ইসলামী ঐতিহ্যের জাদুঘর, রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ফুড কোর্ট ও লাইব্রেরি, সেমি বেসমেন্ট ও নিচতলায় ২৯৩টি দোকান।
স্থপতিরা জানান, ‘সবুজে ঘেরা এই মসজিদের নকশায় এমনভাবে সাউন্ড কন্ট্রোল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে সড়কের গাড়ির শব্দও ইবাদতে ব্যাঘাত না ঘটায়।’
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ফান্ডে আপাতত ১১ কোটি টাকা আছে। সেই অর্থ দিয়েই আমরা কাজ শুরু করছি। সরকার পুরো ব্যয় বহন করবে না, তবে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ সবার চেষ্টায় কাজটি সম্পন্ন হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মসজিদ শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐক্যের প্রতীক। কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামবাসীর জন্য এটি গর্বের এক নতুন দৃষ্টান্ত হবে।’
মুসল্লি পরিষদ সভাপতি সালাহ উদ্দিন কাশেম খান জানান, ‘আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ পুনঃনির্মাণ হলে পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে। মুসল্লিরা স্বস্তিদায়ক পরিবেশে নামাজ আদায় করতে পারবেন। ব্যবসায়ী, ধর্মপ্রাণ নাগরিক— সবাই এই কাজে যুক্ত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চট্টগ্রামের মুসলমান সমাজের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও ধর্মীয় আবেগের প্রতীক। শতাব্দী প্রাচীন এই স্থাপনাটি নতুন রূপে যখন সাজবে মদিনার মসজিদের আদলে, তখন শুধু স্থাপত্য নয়, ইসলামী ঐতিহ্যের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটবে চট্টগ্রামে।