আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না। অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সতর্ক করে বলেন, দেশের চলমান গণতান্ত্রিক প্রকিত্রয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে এই মুহূর্তে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে।

তবে বিতাড়িত অপশক্তি আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রম কোনো শেষ হওয়ার বিষয় নয়। একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন প্রয়োজনীয় সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সরকারে কিংবা সরকারের বাইরে আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পুঁথিগত সংস্কার অনেকটা অকার্যকর।’

তারেক রহমান আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় ভার্চুয়্যালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে- এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে- যারা এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংস্কার কার্যক্রম শেষ হওয়ার বিষয় নয়।’

তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে কমপক্ষে ছয়জন সাংবাদিক শহিদ হয়েছেন। পলাতক স্বৈরাচারের নির্দেশে কমপক্ষে দুই হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সংগঠনের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মী এই লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন।’

সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা একান্ত জরুরি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরশাসকের সময় আমরা দেখেছি গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, লেখক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু ভিন্নমতকে দমন ও দলাদলিতে পরিণত করলে কী হতে পারে তা গত দেড় দশকে দেশের জনগণ হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছে।

পালাতক স্বৈরাচারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মন্ত্রী-এমপি কিংবা বায়তুল মোকাররমের খতিব, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের পলায়নের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, অবৈধ রাষ্ট্রশক্তি নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণের রায়ই চূড়ান্ত।

তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তি ও সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা দরকার। চলমান গণতন্ত্রের যাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করতে নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা নানা কৌশলে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অপশক্তি দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা করছে। তবে আমরা সবাই সতর্ক থাকলে দেশের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক মাফিয়া সরকার বিগত দিনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের হাজার-হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। শত-শত নেতাকর্মীকে গুম করেছে। গণঅভ্যুত্থানের সময় হাজার-হাজার ছাত্রকে হত্যা করেছে। কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এই আন্দোলনে শুধু বিএনপির অঙ্গসংগঠনের ৪ শতাধিক নেতাকর্মী শহিদ হয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগকে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি জনগণের ভোটের রায়ের মধ্যদিয়ে বিদায় করতে হবে। ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলেই জনগণ গণহত্যাকারী, খুনি, লুটেরা এবং তাদের দোসরদেরকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে পারবে।

তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা যাতে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত না হতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আমাদের কর্তব্য। সেজন্য আইনগত এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাদেরকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চার সুযোগ পায়। ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের মালিকানার সম্পর্ক তৈরি হয়।

তিনি বলেন, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা সাধারণ মানুষের মধ্যেই যে কোনও বিষয়, ইস্যুতে দ্বিমত ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটিই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য। ভিন্নমতকে শত্রুতা কিংবা নির্লজ্জ দলাদলিতে করলে কী পরিণতি হতে পারে তা গত দেড় দশকে জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলমান যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে কিন্তু এরই মধ্যে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসর চক্র দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টির পায়তারা করছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির বিদ্যমান অবস্থা-ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপি প্রথম ২৭ দফা সংস্কার উপস্থাপন করেছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করে বিএনপি।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি, সেখানে সাগর-রুনির বিচারের বিষয়ে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না, নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা। এ লক্ষ্যে অর্জনে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান  তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

একই সাথে তিনি  বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত সাংবাদিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এ সময়ে ফ্যাসিবাদী আমলে চাকুরিচ্যুত সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামী ঢাকার মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ডিইউজে যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাঈদ খান।