বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বলেন, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ, ৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের পুরোনা রাজনীতিতে আর ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বিএনপি আয়োজিত ‘৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন নেতারা। সেমিনারে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে কী কী করতে চায়, সেটা তুলে ধরেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এসময় নেতারা মনে করেন, তারা বিএনপির মধ্যে সবাইকে নিয়ে চলার মানসিকতা দেখতে পেয়েছেন। তাই ৩১ দফার ওপর তারা ভরসা রাখতে চান। কারণ, ৩১ দফা একটি পাবলিক কমিটমেন্ট। এটা কার্যকরী না করলে ওয়াদার বরখেলাপকারী হিসেবে তারা জনগণের কাছে চিহ্নিত হবেন।
সেমিনারে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় বিএনপিই যাবে। ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি কী কী করবে, সেটা এখনই স্পষ্ট করেন। তবে এমন কোনো অঙ্গীকার করবেন না, যেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। বিএনপির নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি জানানো খুবই যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। মান্নার মতে, দেশের ভবিষ্যৎ এখন বিএনপির বিচক্ষণতা, আন্তরিকতা ও সঠিকতার ওপর নির্ভর করবে। এটা বুঝেই বিএনপি আগামী দিনে অগ্রসর হবে বলে তার প্রত্যাশা। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ৩১ দফা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ দেশে ফ্যাসিজমের উৎপত্তি ঘটেছে এবং যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ফ্যাসিজম রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে। কাজেই তছনছকৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে মেরামত করতে হলে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। সেই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে যখন যেটা প্রয়োজন সেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আমরা একটি আধুনিক–সমৃদ্ধ–কল্যাণের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।
বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, তিনি বিএনপির মধ্যে সবাইকে নিয়ে চলার মানসিকতা দেখতে পেয়েছেন। বিএনপিকে বলব, তারা যেন ৩১ দফাতেই আটকে না থাকে। প্রয়োজন সাপেক্ষে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটাতে যদি আরও কিছু সংযোজন করা যায়, তাহলে এই রূপরেখা আরও সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী হবে। সেটা বিএনপির বিবেচনা করা উচিত।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব তথা সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের সমস্ত উন্নয়ন বা সমস্ত দাবিনামাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্যারান্টি ক্লজ দরকার। সেটাকে (৩১ দফায়) সন্নিবেশিত করা এবং সেটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া আমাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার দশটি সংস্কার কমিশন করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে তারা রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অনেকগুলো পরিবর্তন এই মুহূর্তে লাগবে। সুতরাং এটাসহ যেসব বিষয়ে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া, সমঝোতা ও মতৈক্য আছে সেসব পরিবর্তন, রিফর্মগুলোর সংস্কারের ব্যাপারে অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। অন্যথায় আমরা যে নির্বাচনটা দেখতে চাই, সেই নির্বাচন করাটা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, ৩১ দফার ওপর আমরা ভরসা রাখতে চাই। এটা আমাদের (যুগপতের শরিকদের) পাবলিক কমিটমেন্ট। যদি আমরা এটা কার্যকরী না করি, ওয়াদার বরখেলাপকারী হিসেবে আমরা জনগণের কাছে চিহ্নিত হব। ৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের পুরোনা রাজনীতিতে আর ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি বিশ্বাস করি, এবারকার গণঅভ্যুত্থান অনেকগুলো প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছে। ৩১ দফায় সবগুলো এখনো নেই। যদি কোনো প্রস্তাব আসে, ইতিবাচকভাবে সেটা বিবেচনা করা দরকার। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অসাধারণ যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, এবার সেটাকে আমরা ধারণ করব এবং দেশকে এগিয়ে নিব।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের যৌথ সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও অ্যাডভোকেট এলিনা খান প্রমুখ।
সেমিনারে জামায়াতের হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নুরুল আমিন বেপারি, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, রাশেদ প্রধান, এনডিপির আবু তাহের, জমিয়তের মহিউদ্দিন ইকরাম, গণতান্ত্রিক বামঐক্যের হারুন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, আব্দুস সালাম, ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিজন কান্তি সরকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আফরোজা খান রীতা, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, মাহবুবের রহমান শামীম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়াসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, পাকিস্তান, ভারত, জাপান, সৌদি আরব, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।