ইরানে হিজাব ফতোয়ার প্রতিবাদে অন্তর্বাসেই পথে তরুণী, গ্রেপ্তারের পরে উধাও

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অন্তর্বাস পরে হাঁটছেন এক তরুণী। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি জায়গায় গিয়ে বসতেও দেখা যায় তাকে। শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর, তা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে। এরপর ওই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তবে তিনি এখন কোথায় আছেন তা কেউ বলতে পারছে না।

ঘটনাটি ঘটেছে ইরানের রাজধানী তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

খবরে বলা হয়, পোশাকবিধির প্রতিবাদ করতেই অন্তর্বাস পরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একাই নীরব প্রতিবাদ করেন তিনি। এ সময় আশপাশে যে নারীদের দেখা গেছে, তাদের সবারই মাথায় হিজাব, শরীর আপাদমস্তক ঢাকা ছিল। এর কিছুক্ষণ পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা ওই তরুণীকে আটক করে।

উল্লেখ্য, ইরানে নারীদের জন্য কড়া পোশাকবিধি রয়েছে। নারীদের আবশ্যিকভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাবে। রাস্তায় বের হলে সবসময় ঢিলেঢালা পোশাক পরার নিয়ম। পোষাকবিধি না মানলে কড়া শাস্তির বিধানও রয়েছে সেখানে। আর সেই বিধি ভঙ্গের অপরাধেই আটক হয়েছেন ওই তরুণী।

এখন ওই তরুণী নিখোঁজ হওয়ায় নানা সন্দেহ দানা বাঁধছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে কুর্দি তরুণী মাহশা আমিনির স্মৃতি ফিরে আসছে। পোশাকবিধি না মানায় তখন মাহশাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতি পুলিশ। পরে পুলিশ হেফাজতেই মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়।

মাহসাকাণ্ড এবং তার পরবর্তী প্রতিবাদের পর, ইরানে হিজাব আইন আরও কড়া হয়েছে। আগে হিজাব আইন ভাঙলে ১০ দিন থেকে দু’মাস পর্যন্ত জেলসহ আর্থিক জরিমানা হত। এখন, সেই মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ডের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। সঙ্গে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানাও হতে পারে।

শনিবার ঠিক কী কারণে ওই তরুণী প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইরানের কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করছে, ওই তরুণী পোশাকবিধি না মেনেই ক্লাসে গিয়েছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে পোশাকবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করেন। এর পরেই ওই তরুণী পোশাক খুলে ফেলেন।

শনিবারের ওই ঘটনায় ইতোমধ্যে সরব হয়েছে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।