সম্প্রতি ক্রেজি ক্যাপশনের খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান “ক্রেজি ইনস্টিটিউট অফ ইনসম্যানিটি স্টাডিজ” একটি চাঞ্চল্যকর জরিপ পরিচালনা করেছে। তাদের মতে, মামাতো বোনকে বিয়ে করলে মানুষের আয়ু ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে। তদন্ত কমিটির প্রধান, ড. মেঘলা মজিদ, জানান, “এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, মামাতো বোনকে বিয়ে করার মাধ্যমে মানসিক শান্তি বৃদ্ধি পায়, যার ফলে দেহের ইমিউন সিস্টেম আরও মজবুত হয়। এছাড়া, পরিবার–পরিজনের সাথে মধুর সম্পর্কের উন্নতি ঘটলে মানসিক চাপ হ্রাস পায়। এ কারণেই আয়ু বেড়ে যায়।” গবেষণায় অংশগ্রহণকারী একজন স্বেচ্ছাসেবী মশিউর রহমান বলেন, “প্রথমদিকে ভাবছিলাম, এটি একটি পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু নিজে অনুভব করলাম, মামাতো বোনের সাথে সম্পর্ক কেবল মানসিক প্রশান্তি দেয় না, বরং জীবনে এক ধরনের পূর্ণতা আনে। আমাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, আর এই আত্মীয়তার বন্ধনকে আরও মজবুত করার মাধ্যমে দেহে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।”
তবে সব ভালোর উল্টো পাশে খারাপ দিক ও আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে,নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে বিজ্ঞানসম্মত নয়। কাকাতো/চাচাতো, মামাতো, মেসুতো/খালাতো ও পিসাতো/ফুফাতো ভাই–বোনদের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি।
মন, ব্লাড ক্যান্সার, হূৎপিণ্ডে ছিদ্র, মস্তিষ্কের গঠন–প্রক্রিয়ায় ত্রুটি, থ্যালাসেমিয়া, ইনফার্ট মরটালিটিসহ বিভিন্ন জেনেটিক সমস্যা সন্তানের দেখা দিতে পারে ।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন যে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র–পাত্রীর দূরত্ব যত বেশি হবে তাঁদের সন্তান তত বেশি মেধাবী হবে । দ্য ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
একই গোত্রের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধের পৌরাণিক ইতিহাস: পৌরাণিক মতে, ব্রহ্মা মানব জাতির সৃষ্টির পর প্রত্যেক ঋষির বংশধরকে একটি করে গোত্র হিসাবে বিবেচনা করেন। ঋষির নাম অনুসারে গোত্রের নামকরন করা হয়।
যেমন, আলিমান ঋষির থেকে অলিমান গোত্রের সৃষ্টি হয়,কাশ্যব ঋষি থেকে কাশ্যব গোত্র ,যামদগ্নি ঋষি থেকে যামদগ্নি গোত্রের সৃষ্টি হয়। এভাবে ব্রহ্মা অসংখ্য গোত্র সৃষ্টি করেন।
ব্রহ্মা একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এই সূত্রের যদি ব্যাখ্যা করা যায় তাহলে দেখা যায় একই গোত্রের মানুষের মধ্যে সেই গোত্রের ঋষির রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। গোত্র সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১২ কোটি বছর আগে। দীর্ঘসময় এর কারনে একই গোত্রের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক অতি নগণ্য বা নাই বললেও চলে তবুও পুরাণে একই গোত্রের মাঝে বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে যাতে সামান্যতম হলে ও এই জাতীয় সমস্যা সন্তানের উপর না পরে। যে ধারা এখনও চলমান।
যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরে বসবাসকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জন্মগত ত্রুটির হার সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এয়ামন শেরিডান। ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী সাড়ে ১৩ হাজার শিশুকে ওই গবেষণার আওতায় আনা হয়।
ব্র্যাডফোর্ড শহরে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বড় একটি অংশ বসবাস করে। সেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৭ শতাংশই রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের প্রচলন রয়েছে। সারা বিশ্বে প্রায় ১৫% মানুষ এ রকম সংস্কৃতি ধারণ করে। কিন্তু পৃথিবীর ৮৫% মানুষ নিকট আত্মীয়ের মধ্যে “বিয়ে” না করার সংস্কৃতি ধারণ করে।