ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু। তিনি গিটার জাদুকরও। ভক্তরা তাকে ‘বস’ বলেও সম্বোধন করতেন। দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম দিকপাল তিনি। তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের আলোচিত ব্যান্ড এলআরবি। তার গান, সুর ও গিটারের সুর আজও মানুষকে বুঁদ করে রাখে। যদিও রুপালি গিটার ফেলে চলে গেছেন তিনি বহুদূরে। কিন্তু আজও আইয়ুব বাচ্চু প্রাণবন্ত হয়ে আছেন ভক্তদের হৃদয়ে।
দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের এই অগ্রপথিকের প্রয়াণ দিবস আজ ১৮ অক্টোবর। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে পরলোকগমন করেন ব্যান্ডসংগীতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেখতে দেখতে সাত বছর হয়ে গেল আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়া। কিন্তু আছে তার সৃষ্টিকরা গানগুলো।
মৃত্যুর সাত বছর পরও তার প্রতি ভক্তদের আবেদন একটু কমেনি। দিন যতই যাচ্ছে আইয়ুব বাচ্চু যেন গানে গানে আরও বেশি জীবন্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর গান পৌঁছে গেছে সারা পৃথিবীর অসংখ্য গানপ্রেমীদের হৃদয়ে।
সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে ভক্ত-অনুরাগীরা আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করবেন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। আজ ১৮ অক্টোবর আইয়ুব বাচ্চুর জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর মগবাজারের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে এটি। এর আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম মিউজিশিয়ানস ক্লাব ঢাকা, আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন এবং বন্ধুমহল। এতে দেশের সংগীতাঙ্গনের তারকারা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনা বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে প্রতিবছরের মতো এবারও সাধ্য অনুযায়ী কিছু আয়োজন রয়েছে। সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন। সৃষ্টিকর্তা যেন ওনাকে জান্নাত দান করেন।’
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৬ সালে কলেজজীবনে ‘আগলি বয়েজ’ নামক ব্যান্ড গঠনের মাধ্যমে সংগীতজগতে তার পথচলা শুরু হয় তার।
১৯৭৭ সালে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডে যোগদান করেন এবং এই দলটির সঙ্গে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কাজ করেছিলেন। একই বছরে তিনি জনপ্রিয় রক ব্যান্ড সোলস-এর প্রধান গিটারবাদক হিসেবে যোগ দেন। সোলসের সঙ্গে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন তিনি।
১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল নিজের ব্যান্ড লিটল রিভার ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। যা পরে লাভ রান্স ব্লাইন্ড বা সংক্ষেপে এলআরবি নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি তার মৃত্যু অবধি ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর ধরে ব্যান্ডটির সঙ্গে ছিলেন।
আইয়ুব বাচ্চু তার এই পথচলায় বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম শীর্ষ তারকা হয়ে উঠেছিলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তার সঙ্গে। ব্যান্ডসংগীতের প্রতি তারণ্যের জোয়ারের ধারা ধরে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
রক বা ব্যান্ডের গানের বাইরেও আধুনিক গান, লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। খুব অল্প গান করেছিলেন চলচ্চিত্রে। সেই গানগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং গায়ক। তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। এটি ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশ হয়। তবে সফলতা শুরু হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে। পরে ১৯৯৫ সালে ‘কষ্ট’ অ্যালবামটি প্রকাশ করেন। এই অ্যালবামের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো ছিল অন্যতম। এই রক তারকার অন্যান্য একক অ্যালবামগুলো হচ্ছে- ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)।
এদিকে, আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবি ১৯৯২ সালে ‘এলআরবি ১’ এবং ‘এলআরবি ২’ বাংলাদেশের প্রথম ডবল অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল। তাদের তৃতীয় অ্যালবাম ‘সুখ’ প্রকাশ হয় ১৯৯৩ সালে। যা ছিল অন্যতম ব্যবসাসফল অ্যালবাম। এরপর ধারাবাহিকভাবে অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে কেবল সফলতাই পেয়েছে এলআরবি। দলটির অনান্য অ্যালবামগুলো- ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারি মন’ (১৯৯৬), ‘আমাদের’ (১৯৯৮), ‘বিস্ময়’ (১৯৯৮), ‘মন চাইলে মন পাবে’ (২০০১), ‘অচেনা জীবন’ (২০০৩), ‘মনে আছে নাকি নাই’ (২০০৫), ‘স্পর্শ’ (২০০৮), ‘যুদ্ধ’ (২০১২), ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ (২০১৬)।
আইয়ুব বাচ্চুর ক্যারিয়ারে অসংখ্য কালজয়ী ও জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। এর মধ্যে- ‘চলো বদলে যাই’, ‘হাসতে দেখো’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘রুপালি গিটার’, ‘মেয়ে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সুখের এ পৃথিবী’, ‘ফেরারি মন’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘সেই তারা ভরা রাতে’, ‘কবিতা’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘তিন পুরুষ’, ‘যেও
‘