চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেইনে ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা-অ্যাসিড নিক্ষেপ এবং গভীর রাত পর্যন্ত অভিযানে আটকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছে যৌথবাহিনী। তারা জানিয়েছে, হামলায় সেনাবাহিনীর পাঁচ জন ও পুলিশের সাত সদস্যসহ মোট ১২ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে ৮০ জনকে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় নগরীর দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কার্যালয়ে চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর টাস্কফোর্স-৪-এর মুখপাত্র লেফট্যানেন্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
লেফট্যানেন্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘ইসকনবিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে নগরীর হাজারী লেনে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে উত্তেজনা ছড়ায়। আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ দুষ্কৃতিকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে তথ্য পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ছয়টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়।’
তিনি বলেন, ‘বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা ও মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করার পরও একপর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারীরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুর্বৃত্তরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহার করা অ্যাসিড নিক্ষেপ করে এবং ভারী ইট-পাটকেলসহ ভাঙা কাঁচের বোতল ছুড়তে শুরু করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর পাঁচজন ও পুলিশের সাতজনসহ ১২ জন আহত হন।’
তিনি জানান, সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্যকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের সামনের কাঁচ ভেঙে ফেলেছে।
উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে যায় যৌথবাহিনীর ১০টি টহল দল। তারা রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা ফের যৌথবাহিনীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এ সময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৮০ জনকে আটক করে।
ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। আটক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে এবং হাজারী লেনসহ নগরীর অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব ধারায় চলবে। এদের সংশ্লিষ্টতা যাচাই-বাছাই চলছে। মাঠপর্যায়ে আমরা গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। সে অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
হাজারী লেনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আমরা নজরদারি রেখেছি। হাজারী লেনসহ শহরের অন্যন্য জায়গাতেও আমাদের নজরদারিতে আছে। এগুলো তদন্তের বিষয়। তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান। ওখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কোনো দোকান সিলগালা করা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে ফেরদৌস বলেন, ‘যেহেতু ওই এলাকায় দোকান থেকে সেনা ও পুলিশ সদস্যের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কয়েকটি দোকান সিলগালা করা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্টতা খুঁজছি। দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোকানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে।’
আটক ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের কোনো পলিটিক্যাল পরিচয় আসলে থাকে না। তাদের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মো. সাইফুল্লাহ, নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-৮ এর সহকারী পরিচালক মো. শফিউল্লাহ, আনসারের উপসহকারী পরিচালক সুলতানা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।