![](https://dainikpurbatara.com/wp-content/uploads/2024/02/CCC-NEWS-PIC-17.jpeg)
![](https://dainikpurbatara.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
কোন চাপে চট্টগ্রামে চলমান ফুটপাত-রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করার কার্যক্রম বন্ধ না করার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র (প্রতিমন্ত্রী) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার সকালে লালদিঘী পাড়স্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষের উদ্বোধন করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
এ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চসিকের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৭তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল বলেন, নগরবাসী রাস্তায় নিরাপদে হাটার অধিকার ফিরিয়ে দিতে নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। আমি জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করেই মাঠে নেমেছি। কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি-চাপ দিয়ে আমাকে থামানো যাবেনা। কোন চাপে আমি নত হবনা, উচ্ছেদ অভিযান চলবে। হকাররা ব্যবসা করুক আমরতো আপত্তি নেই। কিন্তু ফুটপাত দখল করে কেন হকার বসবে? হলিডে মার্কেট করে দিব ওখানে শুক্র-শনিবার হকাররা ব্যবসা করুক। কিছু কুচক্রী মহল ছাড়া রাস্তা-ফুটপাত উদ্ধার হওয়ায় সবাই খুশি।
পিডিবি’র প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, অবৈধভাবে দোকান বসানো ব্যক্তিরা কীভাবে বিদ্যুতের লাইন পেল? আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রতিমাসে কোটি টাকা বিল দেয়। আমাদের কোন প্রতিষ্ঠানের দুই-তিন মাস বিল বাকী থাকলে লাইন কেটে দেন। কোন বাসায় বিদ্যুতের লাইন দিতে গেলেতো অনেক দলিল খুঁজেন। আমার প্রশ্ন ফুটপাত দখলকারীরা কীভাবে বিদ্যুতের লাইন পায়? অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুতের লাইন পেলে কেটে দিব, জেনারেটর পেলে জব্দ করব। ক’দিন আগে আগ্রাবাদে দেখলাম ঝুলন্ত তারের জঞ্জালে আগুন জ¦লছে। পিডিবির বিদ্যুতের পিলারে যাতে ডিশ-ইন্টারনেটের কেবলের জঞ্জালে পরিণত না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ফুটপাত রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, ফুটপাত রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। আমারতো কোন ফোর্স নাই। আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। আমরা যেখানে উচ্ছেদ করছি সেখানে সংশ্লিষ্ট থানা একটু মনিটরিং করলেইতো ভয়ে আর কেউ বসবেনা। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে ছয়মাসের মধ্যে শহরের চেহারা বদলে যাবে। অপরাধও কমে যাবে। নিউমার্কেট মোড়ে দেখেন, অভিযান চালানোর পর ছিনতাই কমে গেছে। আপনাদেরকে বলব, কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি যাতে আমাদের দমাতে না পারে।
“নিউ মার্কেটে কী একটা বিশ্রী অবস্থা। অভিযান চালাতে গিয়ে দখলদারদের হামলায় আমার ম্যাজিস্ট্রেট, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হয়েছে। পুলিশ আহত হয়েছে। হামলাকারীদের প্রতি কোন অনুকম্পা নেই। অনেকে বলে হকার পুনর্বাসন। জহুর হকার মার্কেটতো আমরাই করেছি। আমি তখন ছাত্রনেতা ছিলাম। হকার পুনর্বাসনে কোন সুফল আসেনা। পুনর্বাসন করবেন, এরা দোকানগুলো বিক্রি করে আবার রাস্তায় চলে আসবে। এখন আর বাজারে যেতে হয়না। পথে-ঘাটে সবখানে বাজার হয়ে গেছে এখন। অনেকে বলে ফুটপাতে গরীব মানুষ বসুক, ব্যবসা করুক। ফুটপাত দখলের কারণে মানুষ দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের পরিবারের দায়িত্ব কি কেউ নেন? আমাদেরকে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ নয়। এজন্য ট্রাফিক বিভাগকেও দায়িত্ব নিতে হবে। ”
নগরীর সৌন্দর্যরক্ষায় সবগুলো সংস্থার সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, আমাদেরকে নগরীর সৌন্দর্যের কথাও ভাবতে হবে। পিডিবির অনেক বিদ্যুতের খুঁটি নালায় পড়েছে যে কারণে জলাবদ্ধতা হয় এগুলো সরাতে হবে। রাস্তার মাঝখানে পড়ায় যানজট হয়। এগুলো সরাতে হবে। ওয়াসাকে অনুরোধ করব পানির লাইনে লিকেজ হয়ে যাতে রাস্তা নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সিডিএ’কে বলব জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের কাজের গতি বাড়াতে হবে। ভবন নির্মাণের অনুমতির ক্ষেত্রে চসিকের অনুমতি গ্রহণও বাধ্যতামূলক করলে কেউ ফুটপাত-রাস্তা দখল করে বাড়ি করতে পারবেনা ফলে যানজট কমবে। নগরী পরিচ্ছন্ন রাখতে অনেক কার্যক্রম নিয়েছি। এখন কেউ যত্রতত্র ময়লা ফেললে কে ফেলেছে দেখবনা যার প্রতিষ্ঠান-বাসার সামনে ময়লা পাব তাকে জরিমানা করব।
সভায় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সব ধরনের রিকশা বন্ধ করে সোলার চালিত গাড়ি চালু করার প্রস্তাব দেন। মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম নিউ মার্কেট মোড়ে উচ্ছেদ অভিযানকালে হামলার ঘটনায় মামলার কোন আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি বলে জানান।
সভায় ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপারের স্বার্থে নগরীজুড়ে জেব্রা ক্রসিং গড়ে তুলতে হবে। নগরীতে যেসব নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে সেগুলোর সামনে বিল্ডিং কোড অনুসারে জায়গা ছাড়া হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাটারি রিকশা বন্ধে সমি¥লিত পক্ষেপ দরকার।
পিডিবির প্রতিনিধি উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু মুসা জানান, ব্যাটারি রিকশা এবং অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ কমাতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পিডিবি। ভবিষ্যতে তারের জঞ্জাল কমাতে পিডিবির পোল ব্যবহার ঠেকাতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সভায় বিগত সাধারণ সভার কার্যবিবরণী, দরপত্র কমিটির কার্যবিবরণী এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী অনুমোদিত হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতিগণ তাদের নিজ নিজ স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী পেশ করেন। সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, প্যানেল মেয়রবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।