নিজস্ব ব্রান্ডের গাড়ি বানানোর চিন্তা থেকেই প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সৃষ্টি করা হয়: শিল্পমন্ত্রী

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেছেন, প্রগতি গাড়ি বানাবে, নিজস্ব ব্রান্ড থাকবে, এ চিন্তা থেকেই প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রগতি যে জায়গায় পৌঁছানোর কথা ছিল, সে জায়গায় যেতে পারেনি।
আজ বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)- এর প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড-এর আধুনিক শো-রুম ও সেলস্ সেন্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশে প্রগতি বাস-ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন ক্ষেত্রে যাত্রা শুরু হয়। ব্রিটিশদের কাছ থেকে চেসিস নিয়ে এসে ট্রাক তৈরী করতো প্রগতি। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় সিডান কার বানানোর চেষ্টা শুরু হয়। সে সময় প্রগতি থেকে একটি সিডান কার তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে দেয়া হয়েছিল। প্রগতি এখন বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানী করে এখানে সংযোজন করে। দেশে আজ অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আজকে সময় এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে অঙ্গিকার আমরা করেছি; সে লক্ষ্যে কাজ করার।
মানসম্মত ও যুগোপযোগী পণ্য উৎপাদন করার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র সিডান কার না, সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ী ও মোটর সাইকেল উৎপাদন করতে হবে। অচিরেই কোরিয়ার কারিগরি সহায়তায় প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে আধুনিকায়ন করার পর প্রগতি গাড়ী তৈরি করবে। জ্বালানী সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) তৈরির পরিকল্পনাও আছে।
রাজধানীর তেজগাঁও এ প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড-এর ঢাকা অফিস প্রাঙ্গণে শো-রুম ও সেলস্ সেন্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান এতে সভাপতিত্ব করেন।
উল্লেখ্য, প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডকে আধুনিকায়ন করে গ্রাহকদের সেবা সহজীকরণ ও মানোন্নয়ন করার জন্য আধুনিক শো-রুম ও সেলস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর সাথে রয়েছে আধুনিক ওয়্যারহাউজ। গ্রাহকরা এখন এ শো-রুম হতে সহজেই গাড়ি অবলোকন ও ক্রয় করতে পারবেন। খুব শীঘ্রই চালু করা হবে প্রগতি ত্রি-এস সেন্টার।
১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের জেনারেল মোটরস-এর কারিগরী সহযোগিতায় চট্টগ্রামের বাড়বকুন্ডে গাড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যে ব্যক্তি মালিকানায় গান্ধারা ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডকে জাতীয়করণ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে পরিবহন সেক্টরের উন্নয়নে ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড কোম্পানীর বাস ও ট্রাক সংযোজন করার মাধ্যমে প্রগতি যাত্রা শুরু করে। এরপর ইংল্যান্ড থেকে সুপিরিয়র বাস ও বেডফোর্ড ট্রাক আমদানী করে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে জাপানের মিৎসুবিসি, নিশান ও ইসুজুসহ ভারত, চীন, কোরিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের গাড়ির সিকেডি আমদানীপূর্বক সংযোজন করে ব্যাপকভাবে বাজারজাত শুরু হয়।
বর্তমানে জাপানের মিৎসুবিসি মোটরস করপোরেশনের পাজেরো স্পোর্ট (কিউএক্স) জীপ, মিৎসুবিসি এল-২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ-এর সিকেডি আমদানী করে সংযোজন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া জাপান হতে মিৎসুবিসি ব্রান্ডের এএসএক্স জীপ (কমপ্লিট বিল্ট ইন) সিবিইউ অবস্থায় আমদানী করে বাজারজাত করা হয়। অনেক সময় ক্রেতা সাধারণের চাহিদা বিবেচনায় প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাড়ি সরবরাহ করে থাকে।