দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপি নূরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জহির আহমদ রতনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসাথে তাকে নতুন আরও ৩টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান জামিন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
আসামি জহির উদ্দিন আহমেদ রতন কোতোয়ালি থানার রামজয় মহাজন লেন এলাকার ওসমান মঞ্জিলের হাজী আব্দুল খালেকের ছেলে।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকাল সাড়ে ১১টায় নূরজাহান গ্রুপের এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ রতনকে আদালতে আনা হয়। তিনি জামিন চাইলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে নতুন ৩টি মামলায় আটকাদেশ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগের বেশ কয়েকটি মামলায় আটকাদেশ ছিল।
এর আগে, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর তিনশ ফিট এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এরপর তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।
জহির উদ্দিন আহমেদ রতন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তাসমিন প্রপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেসার্স খালেক অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মারবীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেড এবং তাসমিন প্রপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
কোতোয়ালী থানা ও চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী জহির আহমেদ রতন খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যেরে ব্যবসা করতেন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে নূরজাহান গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংকসহ ১২-১৫টি ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গম, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করেন। ২০১০-১১ মৌসুমে দেশের শীর্ষস্থানীয় গম ও ভোজ্যতেল আমদানিকারক হিসেবে আলোচনায় আসেন জহির আহমেদ রতন। এরপরই ব্যাংকগুলোও গ্রুপটিকে উদারহস্তে ঋণ দিতে থাকে।
ওই সময়ে চট্টগ্রামের সাগরিকা শিল্প এলাকায় জমি কিনে সেখানে দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাও স্থাপন করে নূরজাহান গ্রুপ। পণ্য আমদানির পর ব্যাংকের দায় পরিশোধ না করে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, জমি ক্রয়, ভোগবিলাসসহ বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন গ্রুপটির কর্ণধাররা। ব্যাংকগুলো পাওনা আদায়ে অন্তত ৩০টি মামলা দায়ের করেছেন জহির আহমেদ রতনের বিরুদ্ধে। অর্থঋণ আদালত তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টসহ দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছেন।
জানা গেছে, রতনের নামে ৬৪ মামলার মধ্যে ২৮টিতে সাজা হয়েছে। ৩৩টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরোয়ানা পেন্ডিং ছিল নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে ২৭টি, কোতোয়ালি থানায় ২৪টি, খুলশী থানায় পাঁচটি, পাহাড়তলী থানায় পাঁচটি এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় তিনটি।
অর্থঋণ আদালত ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পণ্য আমদানির আড়ালে পাচার ছাড়াও নামে-বেনামে সম্পদ ক্রয়, বিভিন্ন নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন জহির আহমেদ রতন।
এর আগে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে নূরজাহান গ্রুপের পরিচালক ও জহির আহমেদ রতনের ছোট ভাই টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করেছিল খুলশি থানা পুলিশ। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন ব্যাংকের ২০টি মামলায় অন্তত ১৭টিতে সাজা রয়েছে।