বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ শাখার প্রধান সোমবার বলেছেন, ১ হাজার ফিলিস্তিনী নারী ও শিশুর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে শিগগিরই তাদের গাজা থেকে ইউরোপে সরিয়ে নেওয়া হবে।
হ্যান্স ক্লুজ এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরায়েল চিকিৎসা সেবার জন্য আগামী মাসের মধ্যে আরও ১ হাজার মানুষকে ইউরোপে সরানোর সুযোগ দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এই নারী ও শিশুদের সরিয়ে নেবে। ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় স্বাস্থ্য সুবিধাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে এবং সেখানে চিকিৎসাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতন করছে উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের তদন্তকারীরা দেশটির বিরুদ্ধে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের’ অভিযোগ এনেছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ডব্লিউএইচও প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন মে মাসে বলেছিলেন, প্রায় ১০ হাজার লোককে জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য গাজা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে সেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ডব্লিউএইচও ইউরোপ ইতোমধ্যেই গাজা থেকে চিকিৎসার জন্য ৬০০ জনকে সাতটি ইউরোপীয় দেশে সরিয়ে নিয়েছে।
ক্লুজ বলেন, ‘আমরা সংলাপ অব্যহত না রাখলে এটি কখনই ঘটত না। ইউক্রেনের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।’
তিনি আরো বলেন, আমি সব অংশীদারের সাথে সংলাপ অব্যহত রাখি। এখন, দখলকৃত অঞ্চল (ইউক্রেনের) দনবাসে ১৫,০০০ এইচআইভি-এইডস রোগী এইচআইভি-এইডস ওষুধ পাচ্ছেন।
৫৫ বছর বয়সী এই বেলজিয়ান ‘স্বাস্থ্যকে রাজনীতিকরণ না করার’ গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।
ক্লুজ বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হল শান্তি।’
তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে তাদের কাজ করার অনুমতি দিতে হবে।
‘প্রতিবারই ক্ষোভ’
ডব্লিউএইচওর মতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে ইউক্রেনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রায় ২ হাজার আক্রমণ নিবন্ধিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সর্বদা সম্ভাব্য কঠোরতম ভাষায় এ ধরনের হামলার ঘটনায় নিন্দা অব্যাহত রাখব।
ইউক্রেনের তৃতীয় শীতকালীন যুদ্ধের আগে ক্লুজ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘হামলায় দেশটির বেসামরিক আশি শতাংশ জ্বালানীর উৎস ক্ষতিগ্রস্থ বা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা হাসপাতালে দেখেছি, সার্জনরা তাদের মাথায় বাতি নিয়ে কাজ করছেন। আসন্ন শীত মৌসুম তাদের জন্য খুব কঠিন হবে।’
ইউরোপের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর চাপ থাকা সত্ত্বেও ৫৩টি দেশ ভবিষ্যতে মহামারী ঠেকাতে একত্রিত হতে সক্ষম হয়েছে। এ দেশগুলো ডব্লিউএইচও ইউরোপীয় অঞ্চল তৈরি করে। তাদের মধ্যে মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোও রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপে, আমরা আমাদের হোমওয়ার্ক করেছি।’
বিশ্বব্যাপী মহামারী চুক্তি
ক্লুজ বলেন, ‘আমাদের যা দরকার তা হল- বিশ্বব্যাপী একটি মহামারী চুক্তি। কারণ আমরা যদি শুধু আমাদের অংশটিই করি, তবে আমরা কখনই আমাদের মহাদেশে মহামারীর প্রবেশ ঠেকাতে পারব না। মহামারীর জন্য একটি ইউরোপীয় কৌশল ৩১ অক্টোবর উপস্থাপন করা হবে।
একই সময়ে ডব্লিউএইচও তার সদস্যদেরকে কোভিড মহামারীকালে যেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, এমন আরেকটি ‘সংকট’ এড়াতে ‘প্রয়োজনীয় মৌলিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার সাথে সাথে পরবর্তী সঙ্কট পরিচালনা ও প্রস্তুত করার জন্য’ আহ্বান জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
ক্লুজ বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে ৫৩টি দেশের মধ্যে ন্যূনতম ২৫টিতে অন্তত একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্যজনিত ঘটনা ঘটেছে- যা দেশের নিরাপত্তা পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী অসংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে আমাদের দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছে। তাই, এখন এই দেশগুলোকে যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসা, জরায়ু ও জরায়ুর ক্যান্সারের পরীক্ষা এবং টিকাদান দ্বিগুণ করতে হবে।
ক্লুজ তরুণদের স্বাস্থ্য এবং পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চান।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা খুব স্পষ্ট। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কোভিড-১৯ এর সময় লকডাউনের ফলে উদ্বেগ এবং বিষন্নতার হার ২৫ শতাংশ বেড়েছে এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সাইফুল আলম সিদ্দিকী
সম্পাদকীয় ও বার্তা : ৩২১, নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়ক , দিদার মার্কেট, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম।
ফোন : +৮৮০২৩৩৩৫৪৪৫৮, মোবাইল : +৮৮০১৮৪২-৭৯৭৩১৫
Copyright © 2023 দৈনিক পূর্বতারা. All rights reserved.