সরকারের সর্বত্র এখনো শেখ হাসিনার দোসররা সক্রিয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দেশের প্রশাসনের অবস্থা তুলে ধরে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেটা করেছিলো তারই আপহোল্ড হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা আইন, একই জিনিস। আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছেন। খাদিজা নামের যে মেয়েটা মাস্টার ডিগ্রিতে পড়েন, সে নাকি এখনো কারাগারে- তাহলে প্রশাসন কীভাবে চলছে? শুধু একটা পোস্ট দেয়ার কারণে একজন ছাত্রী এখনো যদি কারাগারে থাকে, তাহলে তো বুঝতে হবে আমরা যেটা বলি- শেখ হাসিনার ভূতরা আজকে আদালতে-প্রশাসনে-পুলিশে আছে। তারা প্রতি পদে পদে এই সরকারকে ব্যাহত করছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সব ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেওয়ার দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদ আর নাৎসিদের কখনোই রাজনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বাসন হতে পারে না। মুসোলিনী আবার ফিরে আসেনি ইতালিতে, হিটলার আবার পুনর্বাসিত হয়নি জার্মানিতে। সুতরাং কোনোভাবেই মাফিয়া-নাৎসি-ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন বাংলাদেশে হবে না। একটি নতুন বাংলাদেশ, একটি বৈপ্লবিক বাংলাদেশ, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি আইনের শাসনের বাংলাদেশ, একটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বাংলাদেশ- সেই সুন্দর স্বপ্নময় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে, সেদিকেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তার জন্য অতি শিগগিরই অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। প্রয়োজনীয় যে সংস্কার তা সম্পন্ন করে অতি দ্রুত জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে দিলে পরেই সেই বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের সরকারের মতো কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিরোধীদলের এতো আত্মত্যাগ, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ওপর এই বিপ্লব রচিত হলো। তাহলে এর টোন, এর ভাষা, এর কার্যক্রম সব কিছু তো বৈপ্লবিক হবে। আজকে ঘাপটি মেরে থাকা শেখ হাসিনার দোসররা প্রশাসনে-পুলিশে প্রত্যেকটি জায়গায় বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিপ্লবী সরকারের কর্মকাণ্ড হবে বৈপ্লবিক। আইনের কথা বলছেন- আইন উপদেষ্টা নিশ্চয়ই একজন গুনি মানুষ, আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন। কিন্তু বিপ্লবী সরকারের দায়িত্ব তো প্রচলিত কোনো আইনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা নয়। প্রচলিত আইন ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা। একটা মাফিয়া সিন্ডিকেটের সরকার, একটা দুর্বৃত্ত নাৎসী- তিনি এই কাজটা করেছেন। ফোজদারি আইনে এক বছরের বেশি সাজা হলে তাকে কারাগারে যেতে হয়-এই আইন এখন মানা হবে কেন? আইন তো ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে, এটা পরিবর্তন করা যাবে না। এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এতো ছাত্র-জনতার যে আত্মদান, এতো রক্ত এখনো গড়িয়ে যাচ্ছে- তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে সরকার, তারা কেন পুরনো আইন দেখিয়ে কাজ করবেন?
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে’ কেন মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে যেতে হয়- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস হয়ে গেল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তিনি কেন দেশে আসতে পারছেন না? কী আইনি প্রক্রিয়া আছে? এই আইন তো মানবতাবিরোধী আইন, এই আইনে স্বার্থরক্ষা করা হয় মাফিয়াদের, স্বৈরাচারের, খুনিদের। এই আইন তো নির্বাহী আদেশের একটা খোঁচায় পরিবর্তন হতে পারে। তাহলে কি আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ভয় পাচ্ছেন? নাকি আপনাদেরকে কেউ নির্দেশ দিচ্ছে কোনো জায়গা থেকে যে, আপনাদের এর বাইরে যাওয়া যাবে না, এইভাবে কাজ করবেন; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেন ফিরতে না পারে- সেই ব্যবস্থার জন্য আপনারা এই কাজগুলো করুন, এগুলো পরিবর্তন করা যাবে না। যেভাবে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো- এই পরিস্থিতি আমরা এই সরকারের কাছ থেকে আশা করতে পারি না।
তিনি বলেন, এতো আত্মত্যাগের পরে যে সরকার সেই সরকার কেন শেখ হাসিনার আইনগুলো টেনে নিয়ে এসে গণতন্ত্রের বিপ্লবী মানুষদের যন্ত্রণা দিচ্ছে- এটা গোটা জাতির আজকে জিজ্ঞাসা। আমরা একটা বিপ্লবী সরকার দেখতে চাই। যে সরকার জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝে কাজ করবে। আমরা শেখ হাসিনার সরকারের মতো সরকার চাই না। চট্টগ্রামের ডিসি মোনাজাত করছেন কাদেরকে নিয়ে? আওয়ামী লীগের যে সমস্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী নমিনেশন জমা দিয়েছেন- তাদের নিয়ে। এই ধরনের সরকার চাই না বলেই তো এতো রক্তপাত, এতো কিছু হলো, এতো ঘটনা হলো- এটা এই সরকারকে বুঝতে হবে।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আমাদের খুব দুঃখ লাগে যে, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরেও আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে দাবি নিয়ে। আমরা এই সমাবেশ থেকে সব বন্ধ সংবাদপত্রসহ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। খুনি হাসিনা যত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এই সরকারের চারপাশে ফ্যাসিবাদের প্রেত্মাতাদের ঘুরে বেড়াতে দেখছি। এই প্রেতাত্মাদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, তাড়িয়ে দিতে হবে। নইলে যেভাবে আমরা রক্ত দিয়েছি, আমরা আবারও ফ্যাসিবাদের দালালদের তাড়ানোর জন্য রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, কেন মাহমুদুর রহমানকে জেলে যেতে হলো, আইন উপদেষ্টাকে বলতে হবে। মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে আমাদের সংগঠনের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ভাইকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো। তিনি এক বছর ৭ মাস কারাবরণ করেছেন এই মিথ্যা মামলায়। তিনি দেখে যেতে পারেননি যে, তার মামলাটি প্রত্যাহার হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে গত ৮ আগস্ট। কোথায় আমাদের সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হলো?
তিনি আরও বলেন, আপনারা আইন দেখিয়ে সেই ফ্যাসিবাদী দোসরদের ক্ষমতায় রাখবার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। আমরা বলতে চাই, আপনাদের আমরা সহযোগিতা করতে চেয়েছি। ২০০৯ সালের পর থেকে যতগুলো মিথ্যা মামলা হয়েছে অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করুন। আমরা ৪৮ ঘন্টা সময় দিতে চাই, নির্বাহী আদেশে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যত কালাকানুন আছে সবগুলো বাতিল করতে হবে, বন্ধ গণমাধ্যমগুলো ক্ষতিপূরণ দিয়ে অবিলম্বে প্রচারে নিয়ে আসতে হবে।
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, একেএম মহসিন, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মুরসালীন নোমানী, মহিউদ্দিনসহ দুই ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক:
রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, প্রশাসন নিরপেক্ষকরণ, নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহার করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে যথেষ্ট অস্পষ্টতা ও ধীরগতি রয়েছে বলে মনে করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন দলটির নেতারা। এমন অবস্থায় দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা তারা বুঝতে চাইছেন। এজন্য দেশের চলমান পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই মাস পার হতে চলল। কিন্তু এখনো নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। তা ছাড়া তারা আগামী দিনের রাষ্ট্র বিনির্মাণে কী চিন্তা করছেন, কখন নির্বাচন দেবেন, রাষ্ট্র সংস্কার কীভাবে করবেন, আগে রাষ্ট্রের সব সংস্কার, নাকি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে যথেষ্ট স্পেস দিতে চান কি না—এসব নিয়ে জনগণের মনে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। এসব প্রশ্নের উত্তর সরকারকে জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসের কার্যক্রমের ভালো-মন্দ দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, প্রশাসনে কয়েক ধাপে রদবদল করা হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীরা এখনো রয়ে গেছে। তা ছাড়া রদবদলে ঘুরে-ফিরে তাদেরই আনা হচ্ছে। এতে করে উল্টো আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হচ্ছে। এই প্রশাসন দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বৈঠকে কেউ কেউ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলছেন। একবার বলছে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে দেড় বছর, একবার বলছে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে। আবার একবার বলছে দেড় বছরের মধ্যে সব সংস্কার কাজ শেষ করা হবে, তারপর নির্বাচন দেওয়া হবে। তাদের মেয়াদকাল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারের একটা বক্তব্যের সঙ্গে আরেকটা বক্তব্য মিলছে না।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশনের গঠন কার্যক্রম আলোচনায় তোলেন দু-একজন নেতা। তারা বলেন, ছয়টি কমিশনের ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরুর কথা ছিল। ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা কাজ করে রিপোর্ট দেবে। সরকার এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। কিন্তু এখন আবার সুর পাল্টে বলছে, আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসবেন। সরকারের কথাবার্তা ও আচরণের মধ্যে মিল থাকছে না। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কোনো কোনো নেতা।
গত ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ছয়টি কমিশন তথা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারকে সহযোগিতা করতে তাদের গঠিত এই ছয় কমিশনের সঙ্গে মিল রেখে ছয়টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করা ছয়টি কমিটির মধ্যে সংবিধান পুনর্গঠন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। সদস্য আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক সুপন ও অধ্যাপক ড. নাজমু জামান ভূঁইয়া ইমন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে। সদস্য হলেন অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিচারক ইকতেদার হোসেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম।
পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। সদস্য হচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইউম, সাবেক ডিআইজি খোদা বক্স ও ডিআইজি খান সাঈদ হাসান।
প্রশাসন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সদস্য হচ্ছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান। দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শরফুদ্দিন চাকলাদার ও বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমানের নাম আলোচনায় রয়েছে। সদস্য হচ্ছেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।
নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে। সদস্য হচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক আমলা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তারা। নেতারা মনে করেন, রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখার মধ্যেই সবকিছু আছে। সেই আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে সবাই মতামত দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এরই মধ্যে বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। আশা করছি, তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। বিএনপিও এই সংস্কার কার্যক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশমালা তুলে ধরবে।’
আগামী শনিবার থেকে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির একটি ছোট টিম অংশগ্রহণ করবে। সেখানে দু-একজন বিশেষজ্ঞও থাকতে পারেন। তবে টিমে কারা কারা থাকবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যার সহযোগী ছিলেন এবং ইতোমধ্যে যারা হত্যা মামলার আসামি—শেখ হাসিনা সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের নেতারা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় বৈঠকে প্রশ্ন তুলে আলোচনা করেন বিএনপির কয়েকজন সদস্য। এ ছাড়া এখনো বিএনপি নেতাদের মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী-সংসদ সদস্য বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাদের কাউকে কাউকে ভারতের বিভিন্ন মাজার ও পার্কেও দেখা গেছে। বিএনপির নেতারা মনে করেন, হত্যা মামলার পরও এসব আসামি কীভাবে পালালেন, কারা তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে, এসব বিষয়ে জনমনে যথেষ্ট প্রশ্ন ও উদ্বেগ আছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সাইফুল আলম সিদ্দিকী
সম্পাদকীয় ও বার্তা : ৩২১, নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়ক , দিদার মার্কেট, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম।
ফোন : +৮৮০২৩৩৩৫৪৪৫৮, মোবাইল : +৮৮০১৮৪২-৭৯৭৩১৫
Copyright © 2023 দৈনিক পূর্বতারা. All rights reserved.