দেশে নিম্নমানের ক্ষতিকর খাদ্যপণ্য উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতের অভিযোগে নেসলে বাংলাদেশ এবং মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার নিরাপদ খাদ্য আদালত। সোমবার দুটি পৃথক মামলায় স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বিথী এই আদেশ দেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান মামলাগুলো দায়ের করেন। তিনি জানান, পরীক্ষায় নিম্নমানের প্রমাণ পাওয়ায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
একটি মামলায় নেসলে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিপাল আবে বিক্রমা এবং পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রিয়াসাদ জামানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই ‘নিম্নমানের’ কিটক্যাট চকলেট-কোটেড ওয়েফার বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়—
ওয়েফারে অ্যাসিডিটির পরিমাণ ২.৩২ শতাংশ, যেখানে বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত সীমা সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। চকলেট আবরণে দুধের কঠিন পদার্থ পাওয়া যায় ৯.৩১ শতাংশ, যা অনুমোদিত ১২–১৪ শতাংশ সীমার নিচে। দুধের ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ ছিল ১.২৩ শতাংশ, যেখানে মানদণ্ড ২.৫–৩.৫ শতাংশ।
খাদ্য পরিদর্শক কামরুল বলেন, ‘উচ্চ অ্যাসিডিটি পচনের নির্দেশক। আর কম দুধের উপাদান মানে দুগ্ধজাত পণ্য হিসেবে বাজারজাত করা হলেও তাতে দুধের উপস্থিতি যথেষ্ট নয়।’
অন্য মামলায় মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মেঘনা সুগার রিফাইনারির চিনিতে অনুমোদিত ৯৯.৭০ শতাংশ সুক্রোজের পরিবর্তে পাওয়া গেছে মাত্র ৭৭.৩৫ শতাংশ।
এ ছাড়া চিনিতে ০.০৮ পিপিএম সালফার ডাই-অক্সাইড শনাক্ত হয়, যেখানে বিএসটিআই মানদণ্ড অনুযায়ী এই রাসায়নিকের কোনো উপস্থিতি থাকা উচিত নয়।
খাদ্য পরিদর্শক কামরুল বলেন, ‘সালফার ডাই-অক্সাইড একটি প্রিজারভেটিভ, যা কৃত্রিমভাবে চিনি সাদা করতে ব্যবহার করা হয়। কম সুক্রোজ থাকার অর্থ হলো চিনির বদলে কৃত্রিম সুইটেনার ব্যবহারের ইঙ্গিত।’
নেসলে বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব দেবব্রত রায় চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিটক্যাটের জন্য বিএসটিআই আলাদা কোনো মানদণ্ড তৈরি করেনি, তাই এতে বিএসটিআই সিল দেওয়া হয় না।
প্রতিষ্ঠানটি দুবাই ও ভারত থেকে কিটক্যাট আমদানি করে এবং প্রতিটি চালানে বিসিএসআইআর পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে কাস্টমস ছাড়পত্র দেয়। তিনি আরও দাবি করেন, ‘মামলা করার আগে আমাদের সঙ্গে কোনো অফিসিয়াল যোগাযোগ করা হয়নি।’
মেঘনা গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। নিরাপদ খাদ্য আদালত মামলাগুলোর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৫ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছে।
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে বেশ সমাদৃত। কিট ক্যাটের যাত্রা শুরু হয় ‘রাউনট্রি’স চকলেট ক্রিস্প’ নামে। ১৯৮৮ সালে নেসলে (সুইজারল্যান্ড) এটি অধিগ্রহণ করে কিট ক্যাট নামকরণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বজুড়ে নেসলে কোম্পানি এই চকোলেটটি উৎপাদন করে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করে হার্শে কোম্পানি। বহুজাতিক কোম্পানির ওই পণ্যের গুণগতমানের অবস্থা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। তারা বলেছেন, এ রকম একটি নামকরা কোম্পানি যদি ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, তাহলে কার ওপর আস্থা রাখব। নেসলের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিৎ।