বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অপারেশনাল দক্ষতায় নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বন্দর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, জাহাজ আগমনী সেবার উন্নয়ন এবং কন্টেইনার–কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতার বৃদ্ধি— সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে বন্দরের পারফরম্যান্স নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এ বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) বন্দরে ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কন্টেইনার, ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৫৫২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৪.৮৭ শতাংশ, ১২.৬৪ শতাংশ এবং ১০.৯৭ শতাংশ বেশি। মোট বৃদ্ধি পাওয়া হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টিইইউএস কন্টেইনার, ১ কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ মেট্রিকটন কার্গো এবং ৩৫১টি জাহাজ।
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই–অক্টোবর) বন্দরে আরও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। এই সময়ে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ৮০৫ টিইইউএস কন্টেইনার, ৪ কোটি ৫২ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ মেট্রিক টন কার্গো ও ১৪২২টি জাহাজ। যা গত অর্থবছরের তুলনায় যথাক্রমে ১০.১৫, ১৫.৭৬ এবং ১১ শতাংশ বেশি।
এছাড়া চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড পরিচালিত নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-তে একই সময় ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭১ টিইইউএস কন্টেইনার ও ২৫৩টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা কন্টেইনারে ১৫.৫০ শতাংশ এবং জাহাজে ১৯.৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
বন্দরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে জাহাজের অপেক্ষার সময় কমানোর ক্ষেত্রে। সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ ৯ দিন, অক্টোবর ১৮ দিন এবং নভেম্বর মাসে ধারাবাহিক ১৯ দিন জাহাজের ওয়েটিং টাইম শূন্য ছিল। অর্থাৎ বন্দরে আগত জাহাজগুলো On Arrival বার্থ পাচ্ছে— যা অপারেশনাল দক্ষতার এক সুস্পষ্ট প্রমাণ।
এর ফলে আমদানি পণ্য দ্রুত ডেলিভারি হচ্ছে, রপ্তানিযোগ্য পণ্য যথাসময়ে জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে এবং Port Lead Time উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিশেষজ্ঞদের মত, এর ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পণ্যমূল্য কমাতে সাহায্য করবে এবং রপ্তানি খাতে আরও গতি আনবে।
বন্দরের এ অগ্রগতির পেছনে রয়েছে— আধুনিক কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংযোজন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণ, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রম, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন পক্ষের সমন্বিত সহযোগিতা।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে আগত মায়ের্স্ক শিপিং লাইনের প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম বন্দরের এই উন্নত অপারেশনাল পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে। তারা বিশেষভাবে জাহাজের অপেক্ষার সময় শূন্যে নামানো এবং এনসিটিসহ বিভিন্ন টার্মিনালের সার্ভিস স্ট্যান্ডার্ড বৃদ্ধিকে “উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন” বলে অভিহিত করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের এই সাফল্য দেশবাসীর কাছে বন্দরের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। পাশাপাশি বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে— এমন প্রত্যাশাও করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।