সমৃদ্ধ ইতিহাস রক্ষায় বড় উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সংস্থাটি নতুন মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে ৭৬টি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করেছে, যেগুলো ভবিষ্যতে সংরক্ষণ করা হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, শহর এলাকায় ৪৪টি এবং বিভিন্ন উপজেলায় ৩২টি স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পুরোনো বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মঠ, সেতু ও লাইটহাউস। যেগুলো সুলতানি আমল থেকে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী।
তালিকায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলোর মধ্যে ১৩১ বছরের পুরোনো ‘হাতির বাংলো’ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ১৮৭২ সালে নির্মিত ‘সিআরবি ভবন’ যা বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজারের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্য উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলোর মধ্যে আছে- কোর্ট বিল্ডিং, ওলি বেগ খাঁ জামে মসজিদ, লালদীঘি ময়দান, পুরোনো সার্কিট হাউস (বর্তমানে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর), সিআরবি শিরিষতলা, কালুরঘাট সেতু, পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব, চন্দনপুরা মসজিদ এবং বদর আউলিয়ার দরগাহ।
শহরের বাইরে ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির, জমিদার বাড়িসহ আরও অনেক স্থাপনা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- হাটহাজারীর ওলি খান মসজিদ ও হামজা খান মসজিদ, আনোয়ারার নরমান্স পয়েন্ট লাইটহাউস, রাউজানের কদলপুর মসজিদ, বোয়ালখালীর সূর্য সেন স্মৃতি ও জমিদার বাড়ি, বিভিন্ন প্যাগোডা ও আশ্রম, যেগুলো চট্টগ্রামের বহু ধর্মীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
সিডিএ’র উপ প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবু ইসা আনসারী জানান, তিনটি মানদণ্ড ঐতিহাসিক গুরুত্ব, কাঠামোর স্থায়িত্ব এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এসব স্থাপনা বাছাই করা হয়েছে। এগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এসব স্থাপনা রক্ষা করাই সিডিএর লক্ষ্য। এই তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে শেয়ার করা হবে, যাতে তারাও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত হলে এসব স্থাপনা ধ্বংসের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পে পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
মাস্টারপ্ল্যানে আরও রয়েছে- পর্যটন মানচিত্র তৈরি, ডিজিটাল তথ্যফলক স্থাপন এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর আশপাশের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. দেবাশীষ কুমার প্রামাণিক উদ্যোগটিকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিশাল। সিআরবি এলাকা, ইউরোপিয়ান ক্লাব, পুরোনো জমিদার বাড়ি, যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র- এসব ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস হাতে-কলমে জানতে পারবে এবং দেশের পর্যটনও সমৃদ্ধ হবে।
সিডিএ আশা করছে, আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হবে। এরপরই সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে