রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

পদুয়ার চরজুড়ে সবুজের উৎসব, শীতের আগেই বেগুনের বাম্পার ফলন

লোহাগাড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০২

বর্ষার বিদায়ে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে যখন প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে, ঠিক তখনই লোহাগাড়ার চরে-বিলে সৃষ্টি হয়েছে শাক-সবজি উৎপাদনের এক ব্যস্ত মৌসুম। মাঠজুড়ে কৃষকদের হাঁকডাক, জমি প্রস্তুত ও ক্ষেত পরিচর্যার দৃশ্যে পাওয়া যায় প্রাণচাঞ্চল্যের ছাপ। বিশেষ করে পদুয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরে-বিলে এখন সবচেয়ে বেশি যেটি নজর কাড়ে— তা হলো সবুজে মোড়ানো বেগুনের ক্ষেত।

পদুয়া ইউনিয়ন লোহাগাড়ার কৃষিজ উৎপাদনের অন্যতম চারণভূমি হিসেবে পরিচিত। পূর্ব পাশে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা হাঙ্গর খালের উর্বর পলিমাটি ও চরের জমির প্রাকৃতিক উর্বরতা এসব এলাকার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। যদিও বর্ষাকালে ভয়াবহ প্লাবনের কারণে কৃষকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে বর্ষার পর সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন শীতকালীন সবজি চাষে। হাঙ্গর খালের ফরিয়াদিকূল এলাকায় নির্মিত রাবার ড্যাম পুরো এলাকায় কৃষকদের সেচব্যবস্থাকে আরও সহজ করেছে।

পদুয়ার হানিফার চর, উত্তর পদুয়া, আঁধার মানিক, জঙ্গল পদুয়া, নাওঘাটা— এসব এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় চোখজুড়ানো বেগুন চাষের বিস্তৃত সবুজ ক্ষেত। কোথাও গাছে ঝুলছে তাজা বেগুন, কোথাও আবার ফুলে-ফলে শোভা পাচ্ছে ভবিষ্যৎ ফলনের আশার প্রতিচ্ছবি। ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকদের মুখে ঝুলছে আশার হাসি।

এলাকা ঘুরে কথা হয় কয়েকজন বেগুন চাষীর সঙ্গে। তাদের ভাষ্যে— সারা বছর বেগুনের বাজার চাহিদা থাকলেও বর্ষায় সরবরাহ কমে যায়, ফলে দাম থাকে বেশি। শীত মৌসুমে উৎপাদন বাড়ায় দাম কিছুটা কমলেও কৃষকদের আয় হয় সন্তোষজনক। বিশেষ করে রমজান সামনে রেখে কৃষকেরা আরও বেশি আশাবাদী, কারণ এসময় বেগুনের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

এসময় আলাপ হয় পদুয়ার সফল বেগুন চাষী সরোয়ার কামালের সঙ্গে। তিনি জানান, নিজের ১৬ শতক জমিতে গ্রীনবল জাতের বেগুন চাষ করে তিনি পেয়েছেন দারুণ ফলন। ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা, আর ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন প্রায় ৬০ হাজার টাকার বেগুন। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে আরও বেশ লাভের আশায় আছেন তিনি। পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ৫০–৬০ টাকা দরে বিক্রি করে তিনি পরিবারের স্বাবলম্বিতা গড়ে তুলেছেন— যা তাকে আরও অনুপ্রাণিত করছে।

স্থানীয় কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিনহাজ উদ্দীন বলেন, ‘পদুয়ার চরে-বিলে কৃষিজ উৎপাদনের সম্ভাবনা অনেক। কৃষকেরা নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা নিচ্ছেন, যাতে তারা প্রতিটি মৌসুমে লাভবান হতে পারেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী মো. শফিউল ইসলাম জানান, লোহাগাড়ায় বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক বেগুন চাষী রয়েছেন। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে কৃষকেরা ভালো ফলনের জন্য ক্ষেত পরিচর্যায় মনোযোগী। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবা প্রদানে তারা সর্বক্ষণ প্রস্তুত।

সব মিলিয়ে পদুয়ার চরে-বিলে এখন শুধু সবুজ নয়— দেখা যায় কৃষকের ঘরে ঘরে ফিরে আসা স্বাবলম্বিতা, পরিশ্রমের ফলাফল এবং আগাম শীতের আনা হাসি।

ভিডিও