রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বৈষম্যের প্রতিবাদে ঘোষিত ৩৬ ঘণ্টার হরতালের কারণে শত শত প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোটাবিরোধী ঐক্যজোটের আহ্বানে ২০ ও ২১ নভেম্বর স্থানীয় যুব ও ছাত্র জনতা হরতাল ডাকেন।
হরতালের ফলে বাঘাইছড়ি ও আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীরা ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকা নিয়োগ পরীক্ষায় রাঙামাটিতে পৌঁছাতে পারেননি। চাকরি প্রত্যাশীরা দাবি করেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়া না হলে এটি ন্যায়সঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য হবে না।
এদিকে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, দেশের সব চাকরির নিয়োগে সরকার ৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে দিলেও রাঙামাটি জেলা পরিষদ সেই বিধান না মেনে নিয়োগ পরীক্ষার শুরু করেছে। ফলে মেধাবীরা বঞ্চিত হবে।
আমরা চাই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। কোটার নামে বৈষম্য আর মেধা হত্যার সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না। ৩৬ ঘণ্টা হরতাল চলাকালীন জেলা শহরের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
জানা গেছে, ২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও নানা কারণে নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। সম্প্রতি পুনঃবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও আগের যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই নতুন তালিকায় বাদ পড়েছেন। এছাড়া বয়সসীমা ৪০ বছর থেকে কমিয়ে ৩২ করা হয়েছে, যা পার্বত্য অঞ্চলের প্রান্তিক যুব সমাজের জন্য নতুন দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে।
যোগ্য তালিকায় বয়স সংক্রান্ত গরমিলও দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে যাদের বয়স বৈধ ছিল, তারা ২০২৫ সালের নতুন তালিকায় অযোগ্য ঘোষণা হয়েছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবতা বিবর্জিত ও বৈষম্যমূলক, যা পার্বত্য এলাকার তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত করবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানবাধিকারকর্মীরা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, উন্নয়নের বদলে এটি বঞ্চনার সৃষ্টি করছে। পার্বত্য অঞ্চলের বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে আলাদা নীতিমালা নেওয়া যেত।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের ২৮টি বিভাগ জেলা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগও রয়েছে। ২১ নভেম্বর শুক্রবার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় ৭ হাজার চাকরিপ্রত্যাশীর এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।