শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামে দায়িত্ব নিলেন নতুন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম

জনবান্ধব ও মানবিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় চট্টগ্রামের নতুন ডিসির

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৪

চট্টগ্রামের নতুন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) হিসেবে যোগদান করেছেন মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। নবাগত জেলা প্রশাসক দায়িত্বভার গ্রহণের সময় একটি জনবান্ধব ও মানবিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চট্টগ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও জেলার স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

চট্টগ্রামে নতুন মিশনে যোগ দিলেও তার আগের কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জে বিদায়ী ডিসি হিসেবে তিনি রেখে এসেছেন মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জেলা ছাড়ার আগের দিনই ফুলে ফুলে সিক্ত হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের ভালোবাসায়। স্থানীয় মানুষের ভাষায়— জাহিদুল ইসলাম ছিলেন নারায়ণগঞ্জের অভিভাবকসুলভ মানবিক জেলা প্রশাসক, যাকে তারা সহজে ভুলতে পারবেন না।

নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনকালে সবচেয়ে আলোচনায় আসে শারীরিক প্রতিবন্ধী কবি ও লেখক ইমরান আহম্মেদের প্রতি তার মানবিক সহায়তা। জন্মগতভাবে অঙ্গহানি নিয়ে জীবনযাপন করা দরিদ্র ইমরানের জন্য তিনি নিজের উদ্যোগে অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার প্রদান করেন এবং তার পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবারও খান। ইমরান বলেন, “এটি শুধু একটি চেয়ার নয়— এটি আমার জীবনে নতুন আশার আলো।” এই এক ঘটনার বাইরে আরও অসংখ্য দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, অসহায় ও কারাবন্দির পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

তার মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিল— ২০ প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার প্রদান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে স্মার্টফোন, আরেক শিক্ষার্থীকে ল্যাপটপ দেওয়া, দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা, শতবর্ষী হকারকে পুঁজি প্রদান, বিল না দেওয়ায় আটকে থাকা পিংকি নামের নারীর মরদেহ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া, জুলাই শহীদ ২১ পরিবারকে ৪২ লাখ টাকার অনুদান এবং কারাগারের ১ হাজার ২৪৪ বন্দির জন্য ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন। এজন্য নারায়ণগঞ্জে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে।

মানবিকতার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও উন্নয়নেও রেখেছেন সফলতার ছাপ। গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচি, মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, হাসপাতালের আইসিইউ চালু, অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদান, ফুটবল একাডেমির শিশুদের জন্য উপকরণ প্রদান— সব ক্ষেত্রেই ছিল তার উদ্যোগ। মাত্র ১১২ টাকায় সরকারি চাকরির নিয়োগ এবং প্রকাশ্য লটারিতে ৩০ জন ইউপি কর্মকর্তাকে বদলি করার মাধ্যমে স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

এর আগে রাজবাড়ীতে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত চার হাজার পেঁয়াজ চাষির পাশে দাঁড়ানো এবং দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা— তার উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল। ১৯৭৯ সালে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে জন্ম নেওয়া জাহিদুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স এবং রাশিয়ান ভাষায় ডিপ্লোমা করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় এমএসসি সম্পন্ন করে ২৫তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসনে যোগ দেন। লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, মৌলভীবাজার ও নোয়াখালীতে এনডিসি, এসিল্যান্ড ও ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কমলগঞ্জে ইউএনও থাকা অবস্থায় জেলার শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান তিনি।

নারায়ণগঞ্জের মানুষ বিদায় জানালেও এখন চট্টগ্রামের মানুষ তাকিয়ে আছে তার নতুন যাত্রার দিকে। তারা আশা করছেন— নারায়ণগঞ্জে যেমন মানবিকতা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতার ছাপ রেখে এসেছেন, তেমনি চট্টগ্রামেও জনবান্ধব প্রশাসনের এক নতুন ধারার সূচনা করবেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার দিন তার কথায়ও সেই বার্তা স্পষ্ট—‘চট্টগ্রামের উন্নয়নে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবো। মানুষের পাশে থাকা এবং জনবান্ধব প্রশাসনই আমার অঙ্গীকার।’

ভিডিও