চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় একসময় প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে প্রতিধ্বনিত হতো কুটিরশিল্পের টুংটাং শব্দ। মাটির হাঁড়ি, বাঁশের ঝুড়ি, বেতের চেয়ার, শীতলপাটি, তালপাতার পাখা— এসব ছিল এলাকার ঐতিহ্য ও জীবিকার অংশ। কিন্তু যান্ত্রিক সভ্যতার দৌড়ে আজ সেসব শিল্প প্রায় বিলুপ্ত। এখনো পদুয়া বাজারের ভাসমান কিছু দোকানে কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে কিছু হস্তশিল্প সামগ্রী, তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে।
উপজেলার দরিদ্র কুটিরবাসীরা আগে ঘরে বসেই তৈরি করতেন নানান হস্তশিল্প সামগ্রী। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এসব কাজে যুক্ত ছিলেন। বাঁশ-বেত, মাটি, তালপাতা, পাট— এসব সহজলভ্য কাঁচামাল দিয়ে গড়ে উঠেছিল একেকটি পরিবারভিত্তিক ছোট শিল্প। কিন্তু বর্তমানে কলকারখানার তৈরি ঝকঝকে পণ্য বাজার দখল করায় এসব ঐতিহ্যবাহী পেশা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
হস্তশিল্পীরা জানান, একসময় উপজেলার বড়হাতিয়া, আধুনগর, চুনতি, আমিরাবাদ, পুটিবিলা ও চট্টলা পাড়ায় ছিল তাঁত, চাটা, পাটি ও মৃৎশিল্পের সমৃদ্ধ কেন্দ্র। স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি এসব পণ্য বিক্রি হতো দূর-দূরান্তে। কিন্তু এখন সেই জৌলুস নেই।

আমিরাবাদের চট্টলা পাড়ার বাসিন্দা মেম্বার নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পাড়া একসময় হস্তশিল্পের চারণভূমি ছিল। কিন্তু এখনকার প্রজন্ম আর এসব শেখে না। সবাই আধুনিক পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। ফলে শিল্পীরা পড়েছেন আর্থিক দুরবস্থায়।’
এলাকার প্রবীণরা জানান, একসময় হস্তশিল্পের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি ছিল প্রাণবন্ত। মহিলারা ঘরে বসে তৈরি করতেন পাটি, পাখা, নকশিকাঁথা, রুমাল ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে এসব কাজ প্রায় বন্ধ।
তাঁতী, কুমার, শাঁখারি, মুচি, কর্মকার, সোনারকার— এসব পেশাজীবীরা আজ বিলুপ্তির পথে। হস্তশিল্পীরা এখন অন্য পেশায় জড়িয়ে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ না নিলে এই ঐতিহ্য একেবারেই হারিয়ে যাবে।