চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় এসেছে বড় পরিবর্তন। এবছর কমানো হয়েছে ২২৫টি আসন, আবেদন যোগ্যতায় কমানো হয়েছে দশমিক ৫০ জিপিএ, এবং শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারীর সন্তানদের পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যাহ পাটওয়ারী ও কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইকবাল শাহীন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, রবিবার সকালে উপাচার্যের দপ্তরে অনুষ্ঠিত ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটির দ্বিতীয় সভায় ভর্তি সময়সূচি পরিবর্তন এবং পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। এতে সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং ভর্তি কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দ পোষ্য কোটা এবার থেকে বাতিল করা হবে। গতবার এ কোটায় ১৬৬টি আসন ছিল, যা এবছর শূন্য থাকবে। এ বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পোষ্য কোটা রাখা হলে শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের চাপ সৃষ্টি হয়। অস্থিতিশীলতা এড়াতে আমরা কোটা বাতিল করেছি। এতে প্রতিযোগিতা বাড়লেও ভর্তি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বছর মোট আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩০৫টি, যা গত বছরের তুলনায় ২২৫টি কম। এর মধ্যে সাধারণ আসন ৩ হাজার ৭৮৬টি এবং ৫১৯টি আসন বিভিন্ন কোটার আওতায় থাকবে। কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় রয়েছে ২১২টি আসন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১১১টি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৯৪টি, অ–উপজাতি (পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি) কোটায় ৫১টি, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায় ২০টি, বিকেএসপি কোটায় ১১টি, পেশাদার খেলোয়াড় কোটায় ৫টি এবং দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য ৯টি আসন বরাদ্দ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি বিভাগে আসন কমানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, রসায়ন, রাজনীতিবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, লোক প্রশাসন ও আইন বিভাগের আসন ১১০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত অ্যাকাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, ফাইন্যান্স ও মার্কেটিং বিভাগেও একইভাবে আসন ১১০ থেকে কমে ১০০ করা হয়েছে। এছাড়া ইতিহাস, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগেও আসন ১২০ থেকে ১০০ করা হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে আসন কমে হয়েছে ১০০টি।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যাহ পাটওয়ারী বলেন, বর্তমানে ভর্তি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কিছুটা কমানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে ফলাফলভিত্তিক শিক্ষা পাঠক্রম চালু হলে প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে, যাতে পাঠদানের মান আরও উন্নত হয়।
ভর্তি যোগ্যতাতেও পরিবর্তন এসেছে। এ বছর থেকে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা তিন ক্ষেত্রেই আবেদনের ন্যূনতম জিপিএ কমানো হয়েছে। এ ইউনিটে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (চতুর্থ বিষয়সহ) মিলে ন্যূনতম জিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০। মানবিক অনুষদভুক্ত বি ইউনিটে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম মোট জিপিএ লাগবে ৬ দশমিক ৫০। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যূনতম জিপিএ ধরা হয়েছে ৭।
এছাড়া মাধ্যমিকে ন্যূনতম ৪ ও উচ্চমাধ্যমিকে ৩ জিপিএ থাকতে হবে। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে ন্যূনতম ২ দশমিক ৫০ এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে ৩ জিপিএ থাকতে হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আমরা ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন এনেছি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে। আমার ইচ্ছা ছিল একদিনেই সব পরীক্ষা নেওয়া যায়, যেমনটি বিশ্বের অনেক দেশে হয়। তবে এবছরও আমরা বিভক্ত সময়সূচিতে পরীক্ষা নেব, যাতে সব ইউনিটের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে সম্পন্ন করা যায়।
তিনি আরও বলেন, পূর্বের ভর্তি পরীক্ষায় যেসব সমস্যা দেখা যেত, তা এ বছর যেন না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রক্রিয়াটি আরও সহজ ও সুশৃঙ্খল করতে বিশ্ববিদ্যালয় সব ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে, ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় প্রাথমিক সময়সূচি ঘোষণা করা হলেও সর্বশেষ সভায় তাতে পরিবর্তন আনা হয়। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২ জানুয়ারি এ ইউনিটের মাধ্যমে। ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ডি ইউনিটের পরীক্ষা, ৫ জানুয়ারি ডি–১ উপ–ইউনিট, ৭ জানুয়ারি বি–১ উপ–ইউনিট, ৮ জানুয়ারি বি–২ উপ–ইউনিট, ৯ জানুয়ারি সি ইউনিট এবং ১০ জানুয়ারি বি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২ জানুয়ারি থেকে। আগের বছরের মতো এবছরও চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগীয় শহরেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।