শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

বোয়ালখালীর শাকপুরা স্কুল

শ্রদ্ধার উৎসবে মানস স্যারের রাজকীয় বিদায়

বোলাখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৭

বয়সের ভারে পাকা চুল, হাতে ফুলের তোড়া, চোখে অশ্রু— তবু মুখে হাসি। চারপাশে প্রিয় শিক্ষার্থীদের ভিড়, সহকর্মীদের আবেগে ভরা মুখ, আর সেই মুহূর্তে আকাশে বাজছে করতালির ঢেউ। বোয়ালখালীর শাকপুরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী সিনিয়র শিক্ষক মানস কান্তি দাশকে দেওয়া হলো এক রাজকীয় বিদায়— ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতায় ভরা এক অনন্য মুহূর্ত।

বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। বিদায়ী শিক্ষককে ফুলে-ফুলে সাজানো গাড়িতে তুলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা অংশ নেন সেই শোভাযাত্রায়। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাজুড়ে করতালি, ফুল ছোড়া আর শুভেচ্ছার ঢেউ। যেন বিদায় নয়, প্রিয় শিক্ষককে ঘিরে এক উৎসব।

এরপর বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত হয় আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল গনি। বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হক, সহকারী প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার চৌধুরী, শিক্ষক মোহাম্মদ ফেরদাউস, তাহমিনা আকতার, সুধীর চক্রবর্তী, প্রজাপতি পাল, করিমুন্নেছা বেগমসহ আরও অনেকে।

বক্তারা বলেন, ‘মানস স্যার শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি এই বিদ্যালয়ের প্রাণ ছিলেন। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে শত শত শিক্ষার্থী, যারা আজ দেশের নানা প্রান্তে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।’

আবেগভরা কণ্ঠে মানস কান্তি দাশ বলেন, ‘দীর্ঘ ৭৩ বছর এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক— ছাত্র হিসেবে শুরু, তারপর শিক্ষক হিসেবে ৩৭ বছরের পথচলা। আজ ছিল আমার শেষ কর্মদিবস। প্রিয় জায়গা ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। এই বিদায় আমাকে অভিভূত করেছে। সবাই যেন আমার জন্য দোয়া করেন, অবসর জীবনটা পরিবারকে নিয়ে শান্তিতে কাটাতে পারি।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হক বলেন, ‘মানস স্যার ছিলেন আমাদের সকলের প্রেরণা। তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ আমাদের কাছে এক শিক্ষণীয় অধ্যায়। আজ প্রিয় সহকর্মীর বিদায় হলেও তাঁর অবদান আমাদের মধ্যে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।’

বিদায় অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা একে একে এগিয়ে আসে প্রিয় শিক্ষককে ফুল ও উপহার দিতে। কেউ হাসছে, কেউ চুপচাপ চোখ মুছছে। কোনো কোনো পুরনো ছাত্র বলছিল, ‘স্যার, আপনি ছিলেন আমাদের দ্বিতীয় অভিভাবক।’

দিনের শেষে সূর্য ডুবতে থাকে, স্কুল প্রাঙ্গণ ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু বাতাসে রয়ে যায় সেই স্নেহ, শ্রদ্ধা আর অমলিন ভালোবাসার ছায়া— একজন শিক্ষকের প্রতি প্রজন্মের অশেষ কৃতজ্ঞতার সাক্ষ্য হয়ে।

ভিডিও