বিলের দিগন্তজোড়া সবুজে লালচে আভা ছড়িয়েছে। রোদের আলোয় চকচক করছে ঘোনা বিলে ঝুলে থাকা পাকা তরমুজ। দূর থেকে মনে হয় যেন প্রকৃতির কোলে রঙিন কারুকাজ। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের শিল্পী চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উত্তর পদুয়ার কৃষক মো. সেলিম।
সংসারের সচ্ছলতা আনতে বহু বছর ধরে কৃষিকাজে নিবেদিত মো. সেলিমে। কিন্তু কৃষি পণ্যের একঘেয়েমি ভাঙতে ও নতুন কিছু করার ইচ্ছে থেকেই তার আগ্রহ জন্ম নেয় আগাম শীতকালীন তরমুজ চাষে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ২০২১ সালে মাত্র ২০ শতক জমিতে প্রথমবারের মতো তিনি ‘পাখিজা সুপার’ জাতের তরমুজ চাষ করেন মালচিং (মাচা) পদ্ধতিতে।
প্রথম চাষেই সাফল্য আসে হাতে। ক্রেতারা ক্ষেতেই এসে প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় তরমুজ কিনে নিয়ে যান। প্রথমবারের সফলতার পর তিনি ক্ষেতের আবাদ বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে উক্ত জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। সময় মতো পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় তার ক্ষেতের প্রতিটি তরমুজের ওজন প্রায় ৩ কেজি থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত হয় বলে জানান চাষী মো. সেলিম।
তিনি জানান, পরনির্ভরশীলতা অভিশাপ মনে করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে স্বজনদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে তিনি তার পেশায় কর্তব্যপরায়ন হন। ফলে, ঝুঁকে পড়েন কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে। কৃষজপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয় আগাম শীতকালীন তরমুজ উৎপাদনে।
স্থানীয় ডিপ্লোমা কৃষিবীদ মিনহাজ উদ্দীন জানান, যে কোন শাক-সবজির ক্ষেতের মালিক তার কাছে পরামর্শের জন্য আসলে তিনি সাথে সাথে পরামর্শ দেন এবং প্রয়োজনে ক্ষেতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট চাষীকে উৎসাহিত করেন। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি তরমুজ চাষী মো. সেলিমকেও ক্ষেত পরিচর্যায় প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. কাজী শফিউল ইসলাম জানান, তরমুজ চাষী মো. সেলিম একজন সফল কৃষক। তার তরমুজ ক্ষেত সার্বক্ষণিক পরিদর্শন করে প্রায়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ারুল আজিম।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারলেও আগ্রহী বিভিন্ন শ্রেণীর কৃষকদেরকে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পদুয়ার মো. সেলিম তরমুজ চাষে একজন সফল কৃষক। কৃষজপণ্য উৎপাদনে তার অদম্য, উৎসাহ-উদ্দীপনা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তরমুজ চাষে তার সফলতা উপজেলার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এতে আগামীতে নতুনভাবে আরও উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।
এ ব্যাপারে তিনি তার কৃষি অধিদপ্তর থেকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন।