বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে এই দ্বীপের পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতি ও সাধারণ জনগণের জীবিকা চরম সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে হোটেল-রিসোর্ট, শুঁটকি মাছ-ডাব বিক্রেতা থেকে শুরু করে দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সকাল ৯টায় রওনা দিলে পর্যটকরা দুপুরের মধ্যে দ্বীপে পৌঁছে ৫ ঘণ্টা ঘুরে কেউ ফিরে আসতেন, আবার অনেকে রাত্রিযাপন করতেন। কিন্তু ইনানী বা নুনিয়াছড়া থেকে সকালে রওনা দিলে বিকেলে দ্বীপে পৌঁছে পর্যটকরা আধা ঘণ্টাও ঘুরতে পারেন না।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের নতুন নিয়মে নভেম্বর ও ডিসেম্বর ২ মাস পর্যটক এলেও দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যাওয়ার অনুমতি থাকবে। আগে যেখানে ৫-৬ মাস পর্যটন ব্যবসায় দ্বীপবাসী সারা বছরের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতেন, এখন দিনে দুই হাজার পর্যটক এলেও যদি রাত্রিযাপন করতে না পারে, তাহলে সেন্টমার্টিন বাসীর অর্থনীতি ধসে পড়বে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আরও দাবি করেন, টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে পুনরায় জাহাজ চলাচল শুরু করতে হবে এবং পর্যটকদের রাত্রি যাপনের অনুমতি দিতে হবে। তাদের মতে, এ দুটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর্যটন নির্ভর প্রায় ৯০% মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর হবে এবং দ্বীপের অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এবং স্বাভাবিক হবে।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ও হোটেল মারমেইড রিসোর্টে দায়িত্বরত মো. তৈয়ব উল্লাহ জানান, আমাদের দেশের আবহাওয়া ও ছুটির দিন মিলিয়ে পর্যটকদের উপযুক্ত সময় হলো নভেম্বর-ডিসেম্বর। একে পর্যটনের পিক টাইম বলা হয়। কিন্তু এ সময়েই সরকার দুই মাস রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করে। পিক টাইমে রাত্রিযাপন এভাবে বন্ধ থাকলে পর্যটকরা বিকল্প গন্তব্য বেছে নেবে, সেন্টমার্টিনের পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।
তিনি আরও জানান, এক্ষেত্রে দ্বীপবাসী ও ব্যবসায়ীদের একমাত্র দাবি পিক টাইমে পর্যটকদের রাত্রি যাপনের অনুমতি পুনর্বহাল করা।
হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিবলী আজম কোরেশি বলেন, আমরা পিক টাইমের জন্য এক বছর প্রস্তুতি নিই। কিন্তু এবার ঠিক সেসময়ে রাত্রিযাপন বন্ধের সিদ্ধান্ত আমাদের দিশেহারা করেছে। এতে স্থানীয় কর্মসংস্থান প্রায় শূন্যে নেমে আসবে এবং শিল্প ধসে পড়বে।
স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন জানান, পর্যটক আসলেই দ্বীপে ব্যবসা চলে, নাহলে দোকান খোলা হয় না। রাত্রিযাপন বন্ধ থাকলে পুরো মৌসুমে আয় শূন্যে নেমে আসবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজুল ইসলাম জানান, সাগরের মাছ ধরা আর পর্যটন ব্যবসা ছাড়া দ্বীপের বাসিন্দাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা- বাণিজ্য নেই৷ অনেকেই ছোট মুদির-দোকান আর চায়ের-দোকান করে কোনো রকম সংসার চালায়।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন জানান, কক্সবাজার নুনিয়াছড়া জেটিঘাট থেকে পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যাবে নাকি উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে যাবে এবং কতজন পর্যটক সেন্টমার্টিনে যাবেন, কিংবা কতদিন রাত্রি যাপন করবেন, নভেম্বর থেকে পর্যটক যাওয়া শুরু করবে কিনা তা নিয়ে এখনো বিস্তারিত জানানো হয়নি। এখনো পর্যন্ত আগের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।