শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

সাড়ে ৪শ বছরের প্রাচীন নিদর্শন, কলাউজানের গাবগাছ আজও কালের সাক্ষী

মো. ইউসুফ

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০৬

কখনো কখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে প্রজন্মদের সামনে উপস্থিত হয় লুকিয়ে থাকা অনেক বিস্মৃত-স্মৃতি। ওইসব স্মৃতির মাঝে বিরাজ করে প্রজন্মদের সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি সমূহের মাঝে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের লক্ষণেরখীল এলাকার গাবগাছটি প্রাচীনকালের অন্যতম নিদর্শন।

প্রায় সাড়ে ৪শত বছরের পুরানো ইতিহাস বুকে ধারণ করে অযত্ন ও অবহেলায় আজো জনপদে টিকে আছে কলাউজান ইউনিয়নের পূর্ব সীমানার গাবতল বাজারের গাবগাছটি। স্থানীয় প্রবীণ লোকেরা জানান, অতি প্রাচীনকালে এ স্থানটি ছিল ঝোঁপ-জঙ্গলবেষ্ঠিত বনাঞ্চল। এ বনাঞ্চলের মাধে জন্ম নেয় উক্ত গাবগাছটি। এর উত্তর পাশের্ব রয়েছে টঙ্কাবতী নদী এবং উত্তর ও পূর্ব পাশের্ব রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রাচীনতম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান লক্ষণেরখীল বৌদ্ধ বিহার। অদূরে রয়েছে বিস্তৃত বনভূমি।

সম্প্রতি এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, অযত্ন ও অবহেলায় জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীনকালে সেই গাবগাছটি। মনে হয়, যৌবনহারা বেদনায় উক্ত গাবগাছটি ফরিয়াদির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কি যেন বলতে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছে।

আলাপ হয় এলাকার তুষার কান্তি বড়ুয়ার সাথে। তিনি বলেন, অতীতের এক সময় এ স্থানটি ছিল বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র। জন-মানবের সাড়া-শব্দ ছিলো না। মানুষ একা আসতে ভয় পেতেন। কালের অগ্রযাত্রায় মানুষের বিবেক-বুৃদ্ধির প্রসার ঘটলে জনগণ স্থানটি সংষ্কার করে শাখা-প্রশাখা ছড়ানো গাবগাছটির যত্ন করতে থাকেন। প্রকৃতির অপরূপ শোভামন্ডিত গাবগাছটির সুশীতল ছায়ায় ক্রমশঃ মানুষের আড্ডা জমতে শুরু করে। মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধিতে বন্যপ্রাণীরা স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। স্থানটি পরবর্তীতর গাবতলা নামে পরিচিতি লাভ করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গাছটি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। যদি এর পরিচর্যা করা হয় তাহলে হয়তো আরো অনেকদিন প্রাচীন কালের ইতিহাস হিসেবে টিকে থাকবে।

উল্লেখ্য, সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষের জ্ঞান-বিবেক ও বুদ্ধির প্রসার ঘটতে থাকে। চিন্তা-চেতনায় মন-মানসিকতার বিকাশ ঘটে। এরপর গাবতলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠতে থাকে দোকানপাঠ। ক্রমশঃ মানুষের আনাগোনায় স্থানটিতে জনাকীর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হলে পরে গাবতল পরিচিতির প্রসার ঘটে ব্যাপকভাবে।

পরবর্তী সময় অর্থাৎ আনুমানিক ১৯৫৯ সালে স্থানীয় চৌধুরী বাড়ির জনৈক ইসলাম চৌধুরী (মাইজ্যা মিয়া) গাবতলার পরিচিতি আরো ব্যাপকভাবে প্রচার করার জন্য ওই স্থানে একটি ঘোড়দৌঁড় মেলার আয়োজন করেন। ফলে, গাবতল স্থানটি ওইসময় মাইজ্যা মিয়ার বাজার নামে পরিচিতি হয়।

সেই অতীত এখন আর নেই। টিকে আছে হারানো বেদনা নিয়ে গাবগাছটি। গাবগাছকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা গাবতল বাজারটির পরিচিতিও সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এর মাঝে আজো শোভা ছড়াচ্ছে প্রাচীনকালের ইতিহাস বুকে ধারণ করে প্রায় সাড়ে ৪ শত বছরের পূরানো গাবগাছটি কালের স্বাক্ষী হয়ে।

ভিডিও