শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

ফটিকছড়িতে নাতির হত্যায় মা প্রধান আসামি

‘আমার মেয়ের ফাঁসি চাই’— নাতি হত্যার বিচার চান নানী

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫১

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার নারায়ণহাট ইউনিয়নের ইদিলপুর বাউদ্দার পাড়ে গত সোমবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) সকালে নিজের শয়নকক্ষ থেকে ২১ বছরের কামরুল হাসান কাউসারের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় নিহতের নানী ফরিদা বেগম শুক্রবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) ভূজপুর থানাায় মামলা দায়ের করে তার মেয়েকে (কাউসারের মা হামিদা বেগম) নাতি হত্যার প্রধান আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করেন।

বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের ধারাবাহিকতায় পুলিশ সোমবারই হামিদা বেগমকে আটক করে। পরে ভুক্তভোগী পরিবারের করা মামলার পর শুক্রবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। ভূজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নানী ফরিদা বেগম অভিযোগ করেন, তার মেয়ে (হামিদা) দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া অবস্থায় ছিল এবং স্থানীয় এক সিএনজি চালক করিমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল— যার বিষয়ে পরিবারের মধ্যে ইতোমধ্যে সন্দেহ ছিল। তিনি বলেন, ‌‌‘আমি আমার মেয়ের ফাঁসি চাই। সে মা হয়ে ছেলেকে হত্যা করেছে— এভাবে আর কোন জঘন্য কাজ পৃথিবীতে হতে পারে না।’

ফরিদা আরও জানান, তার নাতি ছিল পরিবারের আনন্দ— ‘আমার নাতি রাজা’র মতো ছিল’। তিনি দাবি করেছেন, নাতিকে বৈদ্যুতিক শর্ট, ব্লেড দিয়ে আঘাত করে এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে— এমন বিবরণ পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নিহত কামরুল হাসানের পিতা কামাল ভুঁইয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফিরে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাদের পরিবারের মন-মালিকানা ও সম্মানের কথা ভেবে তিনি আগে কিছু বলেননি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার একমাত্র সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে— ‘আমি বিচার চাই, সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’ তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার দাবি জানান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামিদা বেগম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন; কিন্তু “তদন্তের স্বার্থে” সে সব তথ্য এখনই প্রকাশ করা হবে না, বলেন ওসি মাহবুবুল আলম। তিনি আরও বলেন, ঘটনার দোষীদের ছাড় দেয়া হবে না এবং সালিশ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে না—আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা পরিপূর্ণভাবে তদন্ত করা হবে।

ভূজপুর থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল পর্যন্ত পুলিশের তদন্ত চলমান। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো আরও জানায়, ঘটনার সময় এবং সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও সুরতহাল নেয়া হচ্ছে। মামলার তদারকি এবং ঘটনার স্থানের ফরেনসিক ভিত্তিক প্রাথমিক পরিদর্শন করা হয়েছে— তবে মামলা সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রমাণ ও তদন্তের চূড়ান্ত তথ্য এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে ভূজপুর থানা পুলিশ নারায়ণহাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইদিলপুর বাউদ্দার পাড় এলাকার পণ্ডিত বাড়িতে নিজের শয়নকক্ষ থেকে কামরুল হাসান কাউসারের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে সন্দেহজনকভাবে তার মা হামিদা বেগমকে আটক করে পুলিশ।

ভিডিও