জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে মত দিয়েছে নাগরিক সমাজ বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশে প্রকৃত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নেই, শুধুমাত্র কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা যে মতবিনিময় করেছি সেখানে নাগরিক সমাজের অভিমত হচ্ছে— জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। কারণ, স্থানীয় নির্বাচন করার কারণে আমাদের কমিশনের সক্ষমতা বাড়বে। টেস্ট হয়ে যাবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যে সাপোর্ট দরকার হবে, তা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এখন সংস্কারের পূর্বে যদি জাতীয় নির্বাচনে যাই, তাহলে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে—তা ঝুলে যাবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য হলেও সম্প্রতি তাকে প্রধান করে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার।
মতবিনিময় শেষে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আমার প্রশ্ন হচ্ছে—জাতীয় নির্বাচন একটা, আর স্থানীয় নির্বাচন পাঁচটা। পাঁচটার মধ্যে তিনটা নির্বাচন—ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং উপজেলা জাতীয় নির্বাচন ন্যাশওয়াইড হয়। আর সিটি হয়তো লোকালাইজড। আর জেলা পরিষদে আসলে কোনো নির্বাচনই নয়। এখন আমাদের যে চিন্ত ভাবনা স্থানীয় নির্বাচন যেটা আছে, সেটা কোনো সিস্টেম না। আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান, আলাদা আলাদা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। কোনো কমপ্রিহেন্সিভ সিস্টেম নেই। এই সংস্কারের বড় কাজ হবে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করে দেওয়া। এখন সিস্টেম কী হবে, যে সিস্টেম আছে সেটা আইয়ুব খানের ভাবনায় রেখে করা হয়েছে।”
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের ১০ বছর পরে উপজেলা, তারও ১০ বছর পর উপজেলা পরিষদ হয়েছে। এতে করে কম্প্রিহেন্সিভ কিছু হয় নাই। এই সিস্টেম করার জন্য এখন মোক্ষম সময়। কেননা, বেশিরভাগ স্থানীয় সরকার কিন্তু নেই। কেবল ইউপি আছে। আমরা যদি সিস্টেম করতে পারি যে, একটা কম্প্রিহেন্সিভ আইন হবে। সেই আইনের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠান চলে আসবে। এতে একটা তফসিল দিয়ে সবগুলো নির্বাচন করতে পারবো। আগে যেমন মেয়র নির্বাচন করেছি, সিটি নির্বাচন বলছি না। সব আলো পড়ছে মেয়রের ওপর। অন্য স্থানীয় সরকারেও একই অবস্থা। স্থানীয় সরকার যেখানে সফল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও সরাসরি মেয়র, চেয়ারম্যান নির্বাচন হয় না। কাউন্সিলর ও মেম্বার নির্বাচন হয়। তারা পরিষদে গিয়ে নির্বাহী কমিটি তৈরি করে। আমরা তেমন সিস্টেম তৈরি করতে চাই। তাহলে নির্বাচনটা লেস এক্সপেন্সিভ হবে। অনেক সময় সাশ্রয়ী হবে। এত লোকবল লাগবে না।’
তিনি জানান, “একটা হিসাব করে আমি দেখেছি গত কমিশন যে স্থানীয় নির্বাচন করেছে এতে ২৩,০০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯ থেকে ২০ লাখ লোক লেগেছে। ২২৫ দিনের মতো সময় লেগেছে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে যদি পার্লামেন্টারি সিস্টেম নিয়ে আসি—তাহলে ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেন যদি একই সিস্টেমে করতে পারি, তাহলে খরচ চলে আসবে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে। লোক লাগবে আট লাখ। সময় লাগবে ৪৫ দিন। তাহলে এই সিস্টেমে যাওয়ার জন্য অধ্যাদশ করে যদি যান, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব। অথবা বর্তমানে যা আছে তা দিয়ে যদি স্থানীয় নির্বাচন করতে চান, তাহলে পাঁচটা আইন দিয়ে পাঁচটা নির্বাচন করতে হবে। এতে জাতীয় নির্বাচনের আগে তা করা সম্ভব কি-না, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।”
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল বলেন, “পার্লামেন্টের যে মেম্বার তার মধ্যে স্থানীয় কোনো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তার কাজ হচ্ছে সরকারের কাজগুলো জবাবদিহিতার মধ্যে আনা। উনি যদি সব উন্নয়ন করেন তাহলে তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হলো৷ তিনি জবাবদিহি করাবেন কাকে। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী এমপিরা এটা পারে।”