পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই টানা ৪ দিনের ছুটিতে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সৈকত পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে। হোটেল-মোটেলেও যেন ঠাঁই নেই অবস্থা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সৈকতজুড়ে ছিল পর্যটকে ভরপুর। আগাম বুকিং ছাড়া কক্সবাজারে বেড়াতে এসে হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ ভাড়া পাওয়াও অনেক ভ্রমণকারীর জন্য মুশকিল হয়ে পড়েছে। সৈকতে সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জনের জমজমাট অনুষ্ঠান।
দুর্গাপূজার ছুটির সঙ্গে শুক্রবার ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হয়ে টানা ৪ দিনের ছুটির সুযোগ পেয়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তের ভ্রমণবিলাসী লোকজন সাগরপাড়ের ছোট্ট শহরটিতে এসে ভিড় জমিয়েছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই মূলত কক্সবাজারমুখী পর্যটকদের যাত্রা শুরু হয়। তবে বুধবারই সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসে ভিড় জমায়।
ইত্যবসরে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত তিন দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বর্ষণ উপেক্ষা করেই ভ্রমণকারীরা সাগর পারে আনন্দ-উৎসাহে মেতে উঠেছে। তবে বৃষ্টিপাত অনেকের জন্য আবার বিরক্তির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৯০ শতাংশের বেশি কক্ষ আগাম বুকিং রয়েছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, পূজাসহ টানা ছুটি পেয়ে দূর-দূরান্তের পর্যটকরা অনেক আগে থেকেই হোটেল-মোটেলের কক্ষ আগাম বুকিং নিয়ে রেখেছিলেন।
অনেক পর্যটককে আগাম কক্ষ ভাড়া নিশ্চিত না করে এসে পৌঁছায় দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। এদিকে, পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।
কথা হয় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা জার্মানিপ্রবাসী পর্যটক দম্পতি চুয়াডাঙ্গার মেয়ে আসমাউল হুসনা ঊর্মি ও তার স্বামী বিত্ত কাজীর সঙ্গে। সফটওয়্যার প্রকৌশলী বিত্ত কাজী জার্মানে চাকরি করেন এবং স্ত্রী সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছেন। তারা বলেন, কক্সবাজার সৈকত আমাদের দেশবাসীর গর্ব।
দেশের বাড়িতে এসে কক্সবাজার সৈকত দর্শন না করে কর্মস্থলে ফিরে যেতে মন চায় না। তাই মনভরে নিশ্বাস ফেলতেই সাগরতীরে আসা।
পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা পূর্ণিমা-সৈকত দম্পতি কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসেন দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। তারা বলেন, একসঙ্গে ভ্রমণ আবার বিসর্জন অনুষ্ঠানেও যোগ দেওয়া হলো।
কক্সবাজার সৈকত ছাড়াও বেড়াতে আসা পর্যটকদের ভ্রমণের আরেক অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক। টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকে পর্যটকবাহী যানবাহনের খুব ভিড় লেগে ছিল। মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি ঝরনা থেকে একে একে রেজু খালের মোহনা, পেঁচারদ্বীপ, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকতসহ কাঁকড়া সৈকতেও ছিল উপচেপড়া পর্যটকের ভিড়।
মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকততীরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিলাসবহুল হোটেল বেওয়াচ ও সি পার্লসহ আরো অনেকগুলো ছোট রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলোর চেয়েও ইদানীং মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন এসব রিসোর্টই পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে।
মেরিন ড্রাইভের ইনানীর সাগরলতা রিসোর্টের ব্যবস্থাপক শহীদুল জানিয়েছেন, মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন দীর্ঘ সৈকতের নিরিবিলি পরিবেশ এবং সাগরের স্বচ্ছ ও নীলাভ জলরাশি ভ্রমণকারীদের জন্য বড় আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবারের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের ভিড় লক্ষ করে আগে থেকেই ট্যুরিস্ট পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সৈকত এলাকায় অপরাধীরা যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে, সে জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঢাকা থেকেও অতিরিক্ত ৫০ জনের টিম নিয়ে এসেছি। সব মিলিয়ে সৈকতে ৭৫ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ কারণে চুরি, ছিনতাই রোধ করা গেছে।
এদিকে টানা ৪ দিনের ছুটি থাকায় রেলের ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা বাড়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার রাত থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই রুটে ‘ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস’ নামের একজোড়া ট্রেন চালু করেছে।