শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

একটি পক্ষ চাকসু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে, অভিযোগ ছাত্রশিবিরের

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৪২

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন পেছানোর জন্য একটি পক্ষ চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রশিবির। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন সংগঠনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী। চাকসুর নির্বাচনের বিষয়ে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, দীর্ঘ ৩৬ বছর পর চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তবে কোনো মহল এই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘৩০ এবং ৩১ তারিখ যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনায় একটি পক্ষ শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়েছে। আমরা মনে করি, সেই পক্ষই চাকসু বানচালের চেষ্টা করছে।’

নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকার সমালোচনা করে মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রশাসন কোনো আলোচনা ছাড়াই ভোটার ও প্রার্থীর বয়সসীমা তুলে দিয়েছে, যা বিশেষ একটি ছাত্রসংগঠনকে সুবিধা দিতেই করা হয়েছে।

তিনি বলেন, লিখিত প্রস্তাব গ্রহণের পর প্রশাসন কোনো আলোচনা ছাড়াই নিজেদের মতো করে গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে। গঠনতন্ত্রে উপাচার্যকে সভাপতি হিসেবে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজে বাধা তৈরি করবে। প্রয়োজনীয় সম্পাদক পদ না রেখে অপ্রয়োজনীয় সহসম্পাদক পদ যুক্ত করা হয়েছে। দপ্তর সম্পাদক পদটি কেবল পুরুষদের জন্য সংরক্ষণ করে প্রশাসন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

এ সময় চাকসুর বিভিন্ন কমিটিতে সভাপতির সীমাহীন ক্ষমতা কমিয়ে সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট সম্পাদকদের ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি তোলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনে থাকা বেশির ভাগ শিক্ষক একটি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনে থাকা একজন শিক্ষকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেও দাবি করেন তিনি। আলী বলেন, ‘আপনারা যদি নির্বাচন কমিশন দেখেন। সেখানে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটির ৬০ শতাংশ একটি সংগঠনের। আমরা মনে করছি, এটা প্রশাসন একটি পক্ষকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য এই কাজ করেছে।’

মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচার না করায় তাঁরা অবাধে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করছেন। জুলাই বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশাজনক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসন তাঁদের অপরাধের বিচার করতে পারেনি। যার কারণে তাঁরা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া এসব শিক্ষার্থীদের সুযোগ একাডেমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের সুস্থতা কামনা এবং হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে নির্ধারিত সময়েই চাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। তবে প্রশাসনের একপেশে সিদ্ধান্ত ও ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে পরামর্শের ঘাটতি আমাদের মধ্যে উদ্বেগ ও সংশয় তৈরি করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির মনে করে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশকে শক্তিশালী করবে।’

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ডাকসুর মতো চাকসু নির্বাচনেও ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা জয়ী হবেন আশাবাদ ব্যক্ত করে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা আশা করি, চাকসু নিয়ে যেন কোনো ষড়যন্ত্র না হয় এবং ষড়যন্ত্র হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন সেটির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ। এতে সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন রণি বলেন, ‘আমাদের চাওয়া, চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ২৮ হাজার শিক্ষার্থী যেন তাঁদের জন্য যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন। প্রশাসনকে প্রত্যেক ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বসে শিক্ষার্থীরা কী চান, সেটি বুঝতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঞা, শিক্ষা সম্পাদক মোনায়েম শরীফ, সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি আবরার ফারাবী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ভিডিও