শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

ডাকসু নির্বাচন

ডাকসুর প্রচারণা শেষ, ভোট কাল

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২৮

পাঁচ বছর পর ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর ছিল প্রচারের শেষ দিন। এখন ভোট উৎসবের পালা। আগামীকাল ব্যালটের মাধ্যমে ডাকসু ও হল সংসদে পছন্দের প্রার্থী বাছাই করবেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।

দখলমুক্ত পরিবেশে প্রথম ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আট কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ১০০টি বাড়িয়ে ৮১০টি করেছে নির্বাচন কমিশন। গত শনিবার রাতে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

এবার ডাকসুতে মোট প্রার্থী ৪৭০ জন। তাঁদের মধ্য থেকে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহসাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২৮ জনকে বেছে নেবেন ভোটাররা। ভোটার টানার লক্ষ্যে প্রার্থীরা টানা ১২ দিনের প্রচার কার্যক্রম শেষ করেছেন।

গতকাল শেষ দিনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল, শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য, বাম-সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদসহ ১০টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। হল পাড়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, টিএসসি, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, মধুর ক্যানটিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কলাভবন এলাকা, মল চত্বর, বটতলাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছেন প্রার্থীরা। সেই সঙ্গে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন সমানতালে।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারের অভিযোগ, ডাকসু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি আমরা। প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিন ভোট দিতে পারবেন কি না এমন শঙ্কাও শিক্ষার্থীরা আমাদের জানিয়েছেন। একটা গোষ্ঠীকে জেতানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কাজ করছে কি না এমন শঙ্কাও আছে।’

বাকের অভিযোগ করে বলেন, ‘স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির লোকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে চাপ দিচ্ছে, যাতে শিবির বা ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলকে ভোট দেয়। এমন কাজ করত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও ছাত্রলীগ। আপনারা ছাত্রলীগের মতো হয়েন না, ঢাবি শিক্ষার্থীরা এটা মেনে নিবে না।’

একই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে জামায়াতের লোক ভোট চাচ্ছে শিবির-সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে। লেগুনা ভাড়া করে নাজিরা বাজারে নিয়ে যাচ্ছে ও খেয়ে আসছে। যাঁরা ছাত্রত্ব শেষ হয়ে এমফিল করছেন, তাঁদের নাজিরা বাজারই ভরসা।

ডাকসু নির্বাচনের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন শরীরে অস্ত্রোপচারের কারণে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে হয়েছে প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসুকে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গতকাল হুইলচেয়ারে বসে ক্যাম্পাসে এসেছেন তিনি। এসেই সংবাদ সম্মেলনে ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা অনাবাসিক যাঁরা, তাঁরা প্লিজ ভোট দিতে আসুন। ভোট দিতে আসলে একটা ইকুয়েশন বদলে যাবে। এখানে যত সমীকরণ হচ্ছে, তা দাঁড়াবে না। স্বাধীনতাবিরোধীরা একটি পদেও জিতে আসতে পারবে না।’

গতকাল প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, কোনো বড় নেতা এলাকা থেকে ফোন দিয়ে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে ভোট চাওয়া, এটা ফ্যাসিবাদী কায়দা। নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম দেখে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যতগুলো অভিযোগ করেছি, উনারা সুষ্ঠু তদন্ত করেননি, আমাদেরকে ফিডব্যাকও জানাননি। প্রচারণার শুরুর দিনে আমাদের এক নারী প্রার্থীর ছবি বিকৃত করা হয়েছিল, সেটির কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়া ক্রমাগত সাইবার বুলিং করেছে, লিখিত অভিযোগ দিলে সেটারও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল শপথ পাঠের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ। দুপুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি। শপথ বাক্যে তাঁরা ঘোষণা দেন— অতীতের গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, তা আর কখনো ক্যাম্পাসে ফিরতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া ঢাবি ক্যাম্পাসকে নারীবান্ধব, সুরক্ষিত ও সমঅধিকারভিত্তিক এলাকায় পরিণত করা হবে। নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও ক্ষমতায়নের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। শেষ প্রতিজ্ঞায় বলা হয়, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করবেন তাঁরা।

ভিডিও