পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো দেশের সবচেয়ে বড় জশনে জুলুস। নগরের মুরাদপুর সংলগ্ন শোলক বহরের রাস্তায় এদিন দেখা গেল এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য— জামায়াত নেতা ডা. মো. আবু নাছের নিজ হাতে মুসল্লিদের শরবত বিতরণ করছেন।
ভিড়ের ভেতর গরমে হাঁপিয়ে ওঠা অসংখ্য মুসল্লির হাতে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত তুলে দিতে দিতে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন কর্মীদের সঙ্গে। ব্যানারে লেখা ছিল— ‘পবিত্র জশনে জুলুসের সফলতা কামনা করি।’ দৃশ্যটি অনেকে মোবাইলে ধারণ করেছেন, এমনকি ডা. নাছের তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও শরবত বিতরণের কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
সাধারণত ইসলামী আন্দোলন কিংবা জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জশনে জুলুসে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন না। তাদের আকিদাগত অবস্থান আলাদা। তবে এবারের জুলুসে এক জামায়াত নেতার শরবত বিতরণ মুসল্লিদের চোখে এক নতুন চিত্র তুলে ধরল।
একজন জুলুসে আসা একজন বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমাদের আকিদাগত পার্থক্য আছে, তারা সাধারণত জুলুস করে না। কিন্তু এখানে শরবত বিতরণ করতে দেখে ভালো লেগেছে। এটিকে আমরা ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছি।’
অন্য একজন যোগ করলেন, ‘রাজনীতি এক বিষয়, কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠান সবার জন্য। গরমে শরবত পেয়ে আমরা অনেক স্বস্তি পেয়েছি। মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবসময় প্রশংসার দাবি রাখে।’
ধর্মীয় অনুষ্ঠান সবসময়ই রাজনীতির বাইরে এক ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করে। মানুষের ঢল নামা এই জশনে জুলুসে শরবতের মতো একটি ছোট উদ্যোগও যে কতটা প্রভাব ফেলে, তা প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট।
যদিও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ডা. আবু নাছেরের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবু মুসল্লিদের চোখে তিনি হয়তো সেদিন এক ‘অপ্রত্যাশিত অতিথি’।
প্রতি বছর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার উদ্যোগে চট্টগ্রামে আয়োজিত জশনে জুলুস দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিত। লাখো মুসল্লি নবী করিম (সা.) এর জন্মদিন উপলক্ষে এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ধর্মপ্রাণ মানুষদের এই মিলনমেলা শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশে এক বিশেষ ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবারের আয়োজনের ভিড়ে তাই এক ভিন্ন চিত্রও দেখা গেল— ভিন্ন মতাদর্শের একজন রাজনীতিক শরবতের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সাধারণ মানুষের পাশে।