চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। বৃহস্পতিবার(২৮ আগস্ট) বেলা ৩টার দিকে চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা করা হয়েছে।
এতে তফসিল ঘোষণা করেন চাকসুর নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। তবে চাকসু গঠনতন্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই দাবি তুলেছেন গঠনতন্ত্র সংস্কার না করে নির্বাচনের তফসিল দেওয়া যৌক্তিক হয়নি, আগে গঠনতন্ত্র সংস্কার করা উচিত ছিল।
তফসিল ঘোষণায় চাকসুর নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, সংবিধানিক নির্বাচনে আমাদের যা কিছু দরকার, সে দায়িত্বটুকু আমারা পালন করবো, আমরা নির্বাচন কমিশন, চাকসুর গঠনতন্ত্রের সঙ্গে আমরা যুক্ত নই। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী সোমবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোটার তালিকার বিষয়ে আপত্তি জানানো যাবে। পরে ১১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা শুরু হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মনোনয়ন জমা নেওয়া শুরু হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র নেওয়া যাবে। এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
এরপর ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। এরপরই ভোট গণনা শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা ছিল এই প্রশাসন চাকসু নির্বাচন দিবে কিনা, অনিশ্চয়তা হওয়ারই কথা কারণ প্রশাসন যায় প্রশাসন আসে কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক ভাবে কথা বলার জায়গা, গণতন্ত্র চর্চা করার জায়গা চাকসু নির্বাচন পায়নি। তিনি আরো বলেন, আমরা এই তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন দিতে বদ্ধপরিকর।চাকসু নীতিমালা নিয়ে যারা দাবি তুলেছে আমরা প্রশাসন তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান।
এছাড়াও তফসিল ঘোষণার এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, চাকসু কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক জাফর উল্লাহ তালুকদার, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম হোসেন হাবীব প্রমুখ। চাকসু নির্বাচন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। নিয়মিত হওয়ার কথা থাকলেও এতদিনে মাত্র ছয়বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর নানা সময় সাময়িক ঘটনা, সংগঠনগুলোর সংঘর্ষ, সহিংস পরিস্থিতি এবং উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে আর নির্বাচন হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৫১৫। শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করেন চাকসু যেন, তাদের অধিকার রক্ষা, একাডেমিক ও আবাসন সমস্যার সমাধান, ক্যাম্পাসে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক-সামাজিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেয়। পাশাপাশি চাকসু যেন দলীয় রাজনীতির বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে