মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

১১০০ পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিন গেলো তিন জাহাজ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশ : ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১১

দীর্ঘ ৯ মাস পর কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌরুটে আবারও শুরু হয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। মৌসুমের প্রথম দিন সোমবার (১ ডিসেম্বর) ভোর ৭টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে এমভি বার আউলিয়া, কর্ণফুলী ও কিয়ারি সিন্দবাদ নামে তিনটি জাহাজ ১১০০ পর্যটক নিয়ে দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়।

প্রথম দিনের যাত্রা ছিল কড়া নজরদারির মধ্যে। জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ট্যুরিস্ট পুলিশের তদারকিতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ন্ত্রণ, টিকিট যাচাই এবং প্লাস্টিক বহন রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে যাত্রীদের হাতে বিনামূল্যে অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতল তুলে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান জানান, প্লাস্টিকমুক্ত সেন্টমার্টিন নিশ্চিত করতে প্রথম দিন থেকেই কঠোরতা বজায় রাখা হয়েছে।

ঘাটে সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাহিদুল আলম, কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা পর্যটকদের অভিবাদন জানান এবং সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

সরকার ঘোষিত ১২ নির্দেশনা মেনে সোমবার থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপন করার সুযোগ থাকছে। স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, মৌসুম শুরুর সব প্রস্তুতি আগেই নেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় যাত্রা নির্বিঘ্ন ও সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে। নিরাপদ ও মানসম্মত ভ্রমণ নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

এর আগে ১ নভেম্বর সেন্টমার্টিনে পর্যটক প্রবেশ উন্মুক্ত হলেও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। এবার নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে প্রবালদ্বীপে যেতে পারবেন। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ৭টায় জাহাজ ছেড়ে যাবে এবং পরদিন দুপুর ৩টায় কক্সবাজারে ফিরবে।

টিকিট কেনা বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইন নির্ভর করা হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড অনুমোদিত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে, যেখানে থাকবে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড। কিউআর কোড ছাড়া কোনো টিকিটকে বৈধ ধরা হবে না। জেটিঘাটে টিকিট যাচাই করতে ২০ জন ভলান্টিয়ার নিয়োজিত রয়েছে।

দীর্ঘ বিরতির পর পর্যটকদের আগমনে সেন্টমার্টিনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দ্বীপের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, পর্যটন তাদের মূল জীবিকা। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অতিথি আপ্যায়নে তারা প্রস্তুত। জেটিঘাটের কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, দ্বীপের নাজুক প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষায় এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে ১২ নির্দেশনা। রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দদূষণ, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী সব কর্মকাণ্ড, মোটরচালিত যানবাহন, প্লাস্টিক বহন— এসবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। পর্যটকদের হাতে অ্যালুমিনিয়ামের বোতল সরবরাহের মাধ্যমে প্লাস্টিক কমানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, সেন্টমার্টিন দেশের জাতীয় সম্পদ। পরিবেশ রক্ষা ও দায়িত্বশীল পর্যটন নিশ্চিত করতে নির্দেশনা মেনে চলা সবার দায়িত্ব। পর্যটক, জাহাজ মালিক ও প্রশাসনের সমন্বিত তদারকি দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিশ্চিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকদের যাত্রা শুরু হওয়ায় কক্সবাজার ও দ্বীপজুড়ে আবারও উৎসবমুখর পরিবেশ ফিরে এসেছে।

ভিডিও