মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

বাউলদের ওপর হামলা; চট্টগ্রামের ৪০ লেখক-শিল্পীর উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৫

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাউল, মরমি, লোকসঙ্গীত, মঞ্চ, যাত্রা, নৃত্যশিল্পীসহ সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ৪০ জন লেখক, শিল্পী, শিক্ষক, সংগীতশিল্পী ও অধিকারকর্মী। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা উদ্বিগ্ন, হতাশ ও সংক্ষুব্ধ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের চিরায়ত ইতিহাস, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, সংবিধান, নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী মহলবিশেষ যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আর এতে নীরব থেকে মদদ দিচ্ছে রাষ্ট্র। ক্ষেত্রবিশেষে ধর্ম অবমাননাসহ বিভিন্ন অজুহাতে রাষ্ট্রযন্ত্রও নিপীড়নে যুক্ত হচ্ছে। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি, বিশেষ গোষ্ঠী সমাজে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিতে তৎপর হয়ে উঠেছে। কখনও ধর্মের নামে, আবার কখনও নিজেদের কর্তৃত্ববাদী মতাদর্শ চাপিয়ে দিয়ে সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী দেশ থেকে ভিন্নমত ও ভিন্ন-আচারের মানুষদের নির্মূল করার চেষ্টা করছে। তারা মাজারে হামলা করছে, কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে ফেলছে, বাউল-ফকিরদের চুল কেটে দিয়ে হেনস্থা করছে, নারীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তি করছে, নারী অধিকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকিধমকি দিচ্ছে।

নাচগান-নাটক, খেলাধুলা-মেলার আয়োজন আক্রমণ চালিয়ে পণ্ড করে দেওয়ার মতো ঘটনাও আমরা দেখছি। সম্প্রতি ধর্ম অবমানননার অভিযোগ তুলে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর পুলিশের সামনে আক্রমণ করা হয়েছে। এমন অনেক ঘটনা জুলাই গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদি আমলেও আমরা ঘটতে দেখেছি। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও এসব ঘটনার ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তি এবং আরও মারাত্মক হারে ছড়িয়ে পড়া বিচ্ছিন্ন কিছুই নয় বলে আমরা মনে করি।

পরিকল্পিতভাবে দেশের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও মানবতাবাদী চেতনার ওপর সরাসরি আঘাত করা হচ্ছে। বাউল, লালন, লোকজ সঙ্গীতের ওপর আঘাত করে সমাজে বৈচিত্র্য ও সাম্যের চেতনা এবং সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব ধ্বংসের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, সরকারের নীরবতা ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রশ্রয় পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগাকূল করে তুলছে। এতে দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা তো বটেই, আপামর নাগরিকরাও নিজেদের অসহায় বোধ করছে।

সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনাদের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের আবহমান সংস্কৃতি ধ্বংসের চেষ্টাকারী উগ্র শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হোন। অন্যথায় আমাদের দেশ বর্হিবিশ্বে একটি ভয়ানক উগ্রাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পাবে, যা কখনোই কাম্য নয় বরং ভয়ানক উদ্বেগজনক। দেশের নাগরিকদের শান্তিতে বসবাস এবং তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন। বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে অবিলম্বে মুক্তি দিন। সন্ত্রাসের শিকার নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং নিপীড়নকারীদের বিচারের আওতায় আনুন।

বিবৃতি দিয়েছেন, নাট্য নির্দেশক অসীম দাশ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম আরিফ উদ্দিন আহমেদ, নাট্যকর্মী মুবিদুর রহমান সুজাত, চলচ্চিত্র ও সংগীতশিল্পী আলমগীর কবির, লেখক ও সাংবাদিক আহমেদ মুনির, প্রকাশক দীপংকর দাশ, লেখক জাহেদ মোতালেব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী ভাস্কর রায়, উন্নয়নকর্মী দেবাশীষ সেন, সংগীতশিল্পী রাসেল চৌধুরী, কবি রিমঝিম আহমেদ, স্বরূপ সুপান্থ, জয়দেব কর, চিত্রশিল্পী ইরফান জুয়েল, কবি ও প্রকাশক মনিরুল মনির, চৌধুরী ফাহাদ, কবি নৈরিত ইমু, চলচ্চিত্র নির্মাতা পংকজ চৌধুরী, অনুবাদক মাহমুদ আলম, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আসমা বীথি, সাংবাদিক শিউলি শবনম, লেখক রোকসানা বন্যা, কাজী রুনু বিলকিস, শিল্পী ও শিক্ষক জিহান করিম, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ মজুমদার, সাংবাদিক ফজলে এলাহী, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী শাহরিয়ার পারভেজ, অধিকারকর্মী ইউসুফ সোহেল, জাবেদ চৌধুরী, সংস্কৃতিকর্মী সাবিলা তানজিনা, সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুন, ইফতেখার ফয়সাল, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী রমেন দাশগুপ্ত।

ভিডিও