মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

বন্দর–এলডিসি নিয়ে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নিতে পারে না: তারেক রহমান

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩৪

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে প্রকাশিত এক দীর্ঘ ইংরেজি পোস্টে বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের সময়সূচি এবং চট্টগ্রাম বন্দর–সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) প্রকাশিত ওই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের দীর্ঘমেয়াদি ও জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এমন একটি সরকার নিচ্ছে, যার কোনো নির্বাচনী জনসমর্থন নেই। অথচ এসব সিদ্ধান্তের পরিণতি বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে।

পোস্টের শুরুতে গাজীপুরের এক ছোট তৈরি পোশাক কারখানার মালিকের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। ১০ বছর ধরে ব্যবসা গড়ে ওঠার পর হঠাৎ রপ্তানি শুল্ক সুবিধা কমে গেলে কীভাবে সেই উদ্যোক্তা অর্ডার হারান, শ্রমিকদের বেতন দিতে হিমশিম খান- এ বাস্তবতাকে সামনে আনেন তিনি।

একইভাবে তিনি উল্লেখ করেন নারায়ণগঞ্জের এক তরুণীর পরিবারের সংকটের কথা, যাদের আয়ের বড় অংশ নির্ভর করে ওভারটাইমের ওপর। রপ্তানিতে চাপ বাড়লে প্রথমেই ওভারটাইম কমে, এরপর পালা কাটে, শেষে চাকরিও হারানোর ঝুঁকি দেখা দেয়- এ নীরব সংকট কীভাবে লাখো মানুষের জীবনে আঘাত হানে, তা লেখায় তুলে ধরেন তিনি।

তারেক রহমান দাবি করেন, ২০২৬ সালেই এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সূচি বজায় রাখার সিদ্ধান্ত ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক’। কিন্তু সিদ্ধান্তটি নিচ্ছে এমন এক অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের হাতে জনগণের ম্যান্ডেট নেই। অথচ তারা দেশের আগামী কয়েক দশকের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, সরকার বলছে, এলডিসি উত্তরণের সময় পিছিয়ে নেওয়া যাবে না, জাতিসংঘ এটি অপমানজনক মনে করবে। কিন্তু বাস্তবে অ্যাঙ্গোলা, সামোয়ার মতো দেশ সময়সীমা পুনর্নির্ধারণ করেছে। এমনকি অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ক্ষেত্রেও জাতিসংঘ নমনীয়তা দেখিয়েছে।

তিনি প্রশ্নও রাখেন- তাহলে আমরা কেন নিজেদের বিকল্পগুলো আগে থেকেই বাদ দিচ্ছি? আলোচনার টেবিলে যাওয়ার আগেই কেন নিজেদের দর কষাকষির শক্তিকে দুর্বল করছি? তার মতে, ব্যাংকিং খাতের চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ঋণের ঝুঁকি, রপ্তানি কমে যাওয়া- সবই প্রমাণ করে প্রস্তুতি ছাড়া শুধু ‘অধিকার’ দিয়ে উত্তরণ সম্ভব নয়।

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সাম্প্রতিক দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলোও তিনি একইভাবে দেখছেন।

তিনি লিখেছেন, এসব রুটিন সিদ্ধান্ত নয়; বরং জাতীয় সম্পদকে ঘিরে কৌশলগত চুক্তি- যা একটি অনির্বাচিত সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বেঁধে দিচ্ছে। তিনি মনে করেন, এলডিসি উত্তরণের মতোই বন্দর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও জনমত ও আলোচনাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তিনি স্পষ্ট করে জানান- এটি কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়; বরং দেশের প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক আদর্শ রক্ষার প্রশ্ন। এলডিসি উত্তরণ বা বন্দর সংস্কারের বিরোধিতা বিএনপি করছে না; প্রশ্ন হলো, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এমন একটি সরকার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার রাখে কি না।

পোস্টের শেষাংশে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনোই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন নয়। তারা সম্মান, অংশগ্রহণ এবং নিজের কণ্ঠের মূল্য দিতে চায়। সেই কারণেই তিনি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি লেখেন-
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের জন্য কথা বলার, নির্বাচন করার এবং একটি সহজ সত্য পুনর্ব্যক্ত করার সুযোগ- এ দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার অধিকার শুধু তাদেরই, যারা এখানে বাস করে এবং ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এ বিশ্বাস করে।

ভিডিও