জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাবেক আমীর শাহাজাহান চৌধুরীর দেওয়া ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য নিয়ে ফের তোলপাড় চলছে। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছ, ‘যে বক্তব্যটি নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, সেটি তার একান্তই ব্যক্তিগত। এটি দলের কোনো বক্তব্য নয়।’ এদিকে তার এসব ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জামায়াতের এ নেতাকে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি।
এর আগে গত ৬ মে ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার বক্তব্যে ‘চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, এসব অস্ত্র ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের লুকায়িত’— এমন ভুল তথ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন জামায়েত নেতা শাহাজাহান চৌধুরী। তাঁর এই বক্তব্যকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা ফোরামে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। বিব্রত হয়ে পড়েন খোদ দলটির নেতাকর্মীরাও। যদিও পরে এমন ‘ভুল তথ্যের’ জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন নগর জামায়াতের সাবেক এই আমির।
এবার নির্বাচনী দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রশাসনকে ‘দলীয় নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান’ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে তার এসব ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি।
রোববার (২৩ নভেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন, ষড়যন্ত্রপ্রসূত এবং স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এই মন্তব্য নির্বাচনি পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
নেতারা বলেন, প্রশাসনের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি, নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত এবং ভোটাধিকার খর্ব করার উদ্দেশে এমন বক্তব্য রাজনৈতিক দায়িত্ববোধবর্জিত জঘন্য আচরণ। এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংসের পরিকল্পিত অপতৎপরতারই অংশ।
যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তব্য জনগণকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে। তার ভাষণে যে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ফুটে উঠেছে, তা অতীতের মানবতাবিরোধী শক্তির দমন-পীড়নের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
মহানগর বিএনপির দাবি, শাহাজাহান চৌধুরীকে অবিলম্বে তার ‘অশালীন, ঘৃণ্য ও উস্কানিমূলক’ বক্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়- এ ধরনের উস্কানিমূলক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্যের জন্য তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নেতারা আরও বলেন, গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে বরাবরই অটল থাকবে এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা পালন করবে।
শনিবার রাত থেকে মেইনস্ট্রিম গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম— জামায়াতের জ্যেষ্ঠ এ নেতার বক্তব্যে অনেকটা তোপের মুখে ছিলেন জামায়াত ইসলামী। তবে এ ব্যাপারে দলটির স্পষ্ট অবস্থান, ‘সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর দেয়া বক্তব্য একান্তই তার নিজের এবং এ বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না।’
জামায়াতে ইসলামীর ভেরিভাইড ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দলটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে জামায়াত বলছে, ‘বক্তব্যটি আমরা দেখেছি। এটা একান্তই উনার বক্তব্য। এটার ব্যাখ্যা উনি ভালো দিতে পারবেন। তার এ বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এ ঘটনায় আমরা অভ্যন্তরীণভাবেও আমাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের কিছু নেই। অতীতে প্রশাসনের যারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেননি, তারা দেশের ক্ষতি করেছেন।’
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের চট্টগ্রামের নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের সমাবেশে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণকে দিয়ে নয়। আমি ন্যাশনালি বলবো না, যার যার নির্বাচনি এলাকায় যারা আছে, প্রশাসনে যারা আছে, তাদেরকে অবশ্যই আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’
ওই বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষককে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম সকাল বেলায় জেনে নেবে, আর আপনাকে প্রোটোকল দেবে। টিএনও (ইউএনও) সাহেব যা উন্নয়ন এসেছে, সমস্ত উন্নয়নের হিসেবে যিনি নমিনি (জামায়াতের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী) তার থেকে খুঁজে বের করতে হবে।’
তার এর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন ফটোকার্ড। এমনকি শাহজাহান চৌধুরীর এ বক্তব্যের জেরে বিএনপির পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারের দাবিও উঠেছে।