রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের আন্দোলনে উত্তাল চট্টগ্রামের রাজপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১০

বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের রাজপথে বিরাজ করছে উত্তেজনা ও অস্থিরতা। দলীয় মনোনয়নের তালিকা ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলের মধ্য দিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা ও তাঁদের সমর্থকেরা। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা অস্থির হয়ে উঠেছে, মাঠপর্যায়ে স্পষ্ট হয়েছে দলীয় বিভাজন।

মনোনয়ন ঘোষণার পরদিন থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে বঞ্চিতদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও মহাসড়ক অবরোধ, কোথাও আবার কাফনের কাপড় পরে প্রতিবাদ জানানো—সব মিলিয়ে বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক অস্থিরতা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ৬ আসনে বঞ্চিতরা বিদ্রোহ করেছেন। চট্টগ্রামে যে ১০টি আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে সেগুলো হলো-চট্টগাম-১ (মিরসরাই) নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) সরওয়ার আলমগীর, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) কাজী সালাহউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) হুম্মাম কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী) আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) এনামুল হক এনাম, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) সরওয়ার জামাল নিজাম এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা। বাকি ৬ আসনে এখনো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

সীতাকুণ্ডে মনোনয়ন না পেয়ে কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। সড়ক অবরোধ করে তারা দাবি জানান, দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকে উপেক্ষা করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনীত প্রার্থী কাজী সালাহউদ্দিন অবশ্য জানিয়েছেন, দল সব বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আনোয়ারা–কর্ণফুলীতে মনোনয়ন পাওয়া সরওয়ার জামাল নিজামকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরে চলছে লাগাতার বিক্ষোভ। কাফনের কাপড় পরে প্রতিবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ—সব ধরনের কর্মসূচিতেই সক্রিয় বঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা।

একই চিত্র দেখা যাচ্ছে পটিয়া, মিরসরাই, ফটিকছড়ি ও বাঁশখালীতে। মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়েছেন বহু তৃণমূল নেতা। মিরসরাইয়ে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে নিয়ে ক্ষোভ তীব্র; ফটিকছড়িতে সরওয়ার আলমগীরকে মনোনয়ন দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। বাঁশখালীতে মিশকাতুল ইসলাম পাপ্পাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নতুন উত্তেজনা।

হাটহাজারীতেও মনোনয়ন ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ পর আবারও নতুন করে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে ব্যারিস্টার হেলালের বিরুদ্ধে। স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ—ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ‘বহিরাগত’-কে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রীয় দল মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কিছু আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, চট্টগ্রামে বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ সংঘাত আসন্ন নির্বাচনে দলের জন্য বড় ধরনের অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। মনোনয়ন বঞ্চিতদের আন্দোলন দলে যে ভাঙন সৃষ্টি করছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভিডিও