শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

লালদীঘি মাঠে সুন্নী জোটের মহাসমাবেশ

‘নির্বাচন বানচাল হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে’

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩০

‘কোনো মহলের ষড়যন্ত্রে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে দেশ আরও একবার ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে হবে। জনস্বার্থের ইস্যুতে ঐক্যের বদলে বিভাজন বাড়ায় জনগণের শঙ্কা ও উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।’

শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে বৃহত্তর সুন্নী জোট চট্টগ্রাম জেলার বিশাল জনসভায় ১৩ দফা দাবি জানিয়ে সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করেন, জুলাই সনদ ও রাষ্ট্রীয় সংলাপে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ও মতামত অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার কোনো দলের প্রতি পক্ষপাত দেখাবে না এবং সমতাপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন নিশ্চিত করবে।

সমাবেশে বক্তারা দেশে চলমান মবসন্ত্রাস, দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কঠোর সমালোচনা করেন। তারা বলেন, গত ১৫ মাসে সারাদেশে মব তৈরি করে মানুষ হত্যা, অগ্নিসংযোগ, মসজিদ–মাজারে হামলা, মাজার থেকে লাশ তুলে পোড়ানো— এ ধরনের বর্বরতা অতীতে দেখা যায়নি। সরকার ও সেনাবাহিনী ‘মব ভায়োলেন্স বরদাশত করা হবে না’ ঘোষণা দিলেও মাঠপর্যায়ে উদাসীনতা চোখে পড়ছে বলেও অভিযোগ তোলেন বক্তারা।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনো অধরা। দুর্নীতি–দুর্বৃত্তায়ন বরং আরও বেড়েছে।’ কিছু উপদেষ্টার পক্ষপাতমূলক আচরণ সুষ্ঠু ভোটের পথে বড় বাধা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদি বলেন, দেশজুড়ে দারিদ্র্য–বেকারত্ব ভয়াবহভাবে বেড়েছে, শত শত মিল–কারখানা বন্ধ হয়ে লাখো মানুষ কর্মহীন হলেও সরকার উদাসীন। তিনি বলেন, ‘আজ কবরের লাশও নিরাপদ নয়, দেশে যেন নব্য জাহিলিয়াত ফিরে এসেছে।’

বিএসপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন, গত ১৫ মাসে মবসন্ত্রাসের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হত্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক অপমান, মসজিদ-মাজারে হামলা- এগুলো দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সমাবেশে গৃহীত ১৩ দফা দাবির মধ্যে মূল কয়েকটি হলো— ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন যেকোনো অবস্থায় সম্পন্ন করা, রাষ্ট্রীয় সংলাপ ও জুলাই সনদে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক ও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, মাজার–মসজিদ–খানকায় হামলাকারীদের বিচার, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের বিচার, সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠী দমনে ব্যবস্থা, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল, অগ্নিসংযোগ ও কবরস্থানে অমানবিক হামলা বন্ধ, ছাঁটাইকৃত ব্যাংক কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত।

ভিডিও