শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে লোহাগাড়ার লোকজ ঐতিহ্য, টিকে আছে ‘ঘোড়দৌড়’

লোহাগাড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৪

একদা বর্তমান লোহাগাড়া উপজেলার জনপদগুলো ছিল লোকজ সংস্কৃতি, গ্রামীণ মেলা ও ঐতিহ্যবাহী আনন্দ-উৎসবে মুখর। পল্লীর মানুষ তখন জীবনের দুঃখ-দুর্দশাকে হার মানিয়ে আনন্দ ও মিলনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বন্ধনে একাত্ম ছিল। আজ সেই সব রঙিন আয়োজন সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে। কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে কেবল আমিরাবাদ ইউনিয়নের প্রাচীন নিদর্শন ‘বড় মাওলানার ঘোড়দৌড় মেলা’।

লোকজ সংস্কৃতি মানে মানুষের আত্মিক বিকাশ, নান্দনিক চেতনা ও সৌন্দর্যবোধের প্রকাশ। সেই সময়ের মানুষ ছিলেন সহজ-সরল প্রকৃতির, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও উদার মনের। তাঁরা গ্রামীণ মেলা, গানের আসর ও নাট্যচর্চার মাধ্যমে সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় রাখতেন।

একসময় লোহাগাড়ার জনপদে জারি, সারি, মারফতী, ভাটিয়ালী, রাখালী, কবিগান, পুঁথিপাঠ, পালাগান— এসব ছিল সাংস্কৃতিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। বিয়েতে পালকী, তানজান, বৈশাখ ও পৌষের মেলায় গরুর লড়াই, বলিখেলা, কিংবা মাঠভর্তি জাদু ও তুম্ব্রু খেলা— সবই ছিল লোকজ উৎসবের অংশ।

প্রবীণ শিক্ষক মোবারক আলী, প্রবীণ ব্যক্তি আহমদ কবির ও মো. শফি জানান, সেই সময়ের মানুষ ছিলেন নির্মল, সরল ও উদার। তাঁদের আনন্দ ছিল নিজেদের সংস্কৃতিতে, নিজের মাটির গন্ধে। এখন অপসংস্কৃতি ঢুকে গেছে, তাই সেই সৌন্দর্য আর নেই।

একসময় দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতো সামাজিক ও ঐতিহাসিক নাটক। সাহিত্যরসিক বাবু নির্মল চন্দ্র পাল পরিচালিত সেই নাটকে অংশ নিতেন এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা। অভিনেতা নুরুন্নবী চৌধুরী, মমতাজুল ইসলাম, মাস্টার অলি উল্লাহ চৌধুরী, রেজাউল কবির, ও কৌতুক অভিনেতা মাহমুদুল হক-এর অভিনয়ে দর্শকরা মুগ্ধ হতেন।

কালের বিবর্তনে সেই মেলা, গান, নাটক, গ্রামীণ মিলনমেলা সবই এখন অতীত। স্থানীয় প্রবীণদের ভাষায়, ‘আজকের প্রজন্ম জানে না তানজানের গান বা ভাটিয়ালীর সুর কেমন ছিল। অপসংস্কৃতির দখলে হারিয়ে গেছে সেই স্বাদ, সেই রূপ।’

তবুও আশার কথা, আমিরাবাদের শতবর্ষ প্রাচীন বড় মাওলানার ঘোড়দৌড় মেলা আজও টিকে আছে ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে।

ভিডিও