চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক অচলাবস্থা যেন দীর্ঘায়িতই হচ্ছে। কমিটি বিলুপ্তির পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও গঠন হয়নি কোনো নতুন উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কিংবা ওয়ার্ড। এতে তৃণমূল পর্যায়ে দেখা দিয়েছে হতাশা, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা।
গত ২২ মে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায় আট উপজেলা, ছয় পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও নতুন নেতৃত্ব গড়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু নতুন কমিটি গঠনে বিলম্বে তৃণমূলে থমকে গেছে দলীয় কার্যক্রম।
স্থানীয় নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। উপজেলা ও পৌর পর্যায়ে ‘অভিভাবকশূন্য’ অবস্থায় সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই শূন্যতা দলীয় প্রচারণা ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত করে বলা হয়েছিল দ্রুত নতুন কমিটি দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এতে সক্রিয় কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কমিটি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তিন দফায় আবেদন গ্রহণ করে দক্ষিণ জেলা বিএনপি। এতে ১,৮৯৭টি আবেদন জমা পড়ে। গত আগস্টে ওই তালিকা প্রকাশের পর দেড় শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে আহ্বায়ক কমিটি সীমিত আকারে প্রকাশের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া জানান, ‘আমরা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি জানিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুমতি ছাড়া কোনো কমিটি ঘোষণা করা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আমরা প্রস্তাবিত তালিকা জমা দিতে চাইলেও কেন্দ্র তা এখনো গ্রহণ করেনি।’
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে সীমিত আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতৃত্ব তৈরি করা হবে।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত আছেন। আগামী সপ্তাহে তিনশ আসনের মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে। তাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত।’
তৃণমূলের অভিযোগ, দলীয় পরিচয় ছাড়া সাংগঠনিক কাজ গতি হারিয়েছে। বহু বছর আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা ত্যাগী নেতারা পদ-পদবির আশায় অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন নেতৃত্ব না এলে দলীয় অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পর্যায়ের বহু নেতা।